
ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মদিন পালন
মুফতি মোস্তফা কামাল কাসেমি
বর্তমান সমাজে জন্মদিন পালনের প্রবণতা একটু বেশিই পরিলক্ষিত হচ্ছে। ধনী হোক আর গরীব হোক, নিজ জন্মের দিনটা ঘটা করে পালন না করলে যেনো মনে শান্তি আসে না। কেবল মানুষ নয়, কিছু বিত্তশালী পোষা কুকুরটিরও জন্মদিন পালন করে! এদিন তারা নানা আয়োজন করে বন্ধু-বান্ধবকে নিমন্ত্রণ করে, আনন্দ-উল্লাস করে, মদ্যপান করে, নর্তকী নাচিয়ে ফুর্তি করে এবং নানা অপকীর্তিতে লিপ্ত থাকে।
কেক কেটে জন্মদিন পালনের উদ্ভব সর্বপ্রথম ঘটে পশ্চিমা দেশগুলোতে। আর জন্মদিনের সূচনা হয় ফেরাউন থেকে। বাইবেলের বুক অব জেনেসিসে এসেছে, তৃতীয় দিনটা ছিল ফেরাউনের জন্মদিন। ফেরাউন তার সব দাসদের জন্য ভোজের আয়োজন করলেন। সেই সময় ফেরাউন রুটিওয়ালা ও খাদ্যদ্রব্য পরিবেশককে কারাগার থেকে মুক্তি দিলেন। (আদি পুস্তক: ৪০২)
সুতরাং বুঝা গেলো, জন্মদিন পালনের উদ্ভব ঘটেছে বিধর্মীদের থেকে। ইসলামে এর কোনো ভিত্তি নেই। ইসলাম কখনোই এমন অপসংস্কৃতিকে প্রশ্রয় দেয় না। জন্মদিন পালনের গুরুত্ব যদি ইসলামে থাকতো, তাহলে সাহাবায়ে কেরাম (রা.), তাবেয়ি, তাবে তাবেইনদের থেকে এটি পালনের প্রমাণ মিলতো। তারা জন্মদিন পালন করবেন তো দূর, কারো কারো জন্মসন জানা গেলেও কোন মাসের কোন তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন তা অবধি জানা যায়নি। এমনকি আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) রবিউল আওয়াল মাসের কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন এটা নিয়েও রয়েছে মতভেদ। বিধায় জন্মদিন পালন নিঃসন্দেহে একটি বিদআত ও গুনাহর কাজ। এদিন ফেসবুকে কাউকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো, আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধব জমায়েত হয়ে উৎসব করা, অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, বিশেষ দোআ, সালাম বা উপহার পেশ করা, বয়স অনুপাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে তা ফুঁ দিয়ে নেভানো, কেক কেটে খাওয়া প্রভৃতি কাজ কোনো মুসলিমের জন্য বৈধ নয়।
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির অনুসরণ করবে বিঘত-বিঘত এবং হাত-হাতের সমপরিমাণ। এমনকি তারা যদি সাপের গর্তে প্রবেশ করে, তাহলে তোমরাও তাদের পেছন পেছন যাবে। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রসুল! আপনি কি ইহুদি ও নাসারাদের অনুকরণ করার কথা বলছেন? নবী করিম (সা.) বললেন, তবে আর কার? (বুখারি: ২৬৬৯)
অন্য একটি হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি যে জাতির আনুরূপ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই দলভুক্ত। (সহিহুল জামে: ৬০২৫) নবী করিম (সা.) আরো বলেন, সে ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়, যে আমাদেরকে ছেড়ে অন্য কোনো জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে। তোমরা ইহুদিদের সাদৃশ্য অবলম্বন করো না, খৃস্টানদেরও সাদৃশ্য অবলম্বন করো না।’ (সিলসিলাহ সহিহা: ২১৯৪)
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ কর। তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কারো অনুসরণ করনা। তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর। (সুরা আরাফ: ৩) তাছাড়া জন্মদিনে খুশি হয়ে আনন্দ-উৎসব করা নেহাতই বোকামী। কেননা, জীবন থেকে একটি বছর ঝরে গেলে তাঁর জন্য আক্ষেপ ও দুঃখ করা উচিত, খুশি নয়। এমনিভাবে নিজের জন্মদিন পালনের মতো বড় কোনো ব্যক্তির জন্ম বা মৃত্যুদিন পালন করা, শোকসভা করাও বিদআত। কোনো মুমিন এসকল কর্মকা-ে কখনোই জড়াতে পরে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহিহ বুঝ দান করুন। আমিন।
