মাওলানা যোবায়ের আহমদ
এ উম্মতের পরাজয়, ভীতি ও অপদস্থতার আধ্যাত্মিক চিকিৎসাও কেবল এটাই যে, এ উম্মত নিজের অবস্থান জানবে এবং দাওয়াতকে উদ্দেশ্য বানিয়ে নেবে। আর সমগ্র মানবতার এ পথভ্রষ্টতাকে কেটে দিয়ে তাকে কুফর ও শিরকের অন্ধকার থেকে বের করে আনাকে নিজের উদ্দেশ্য জানবে, আর নিজেদেরকে দা‘য়ী উম্মত হিসেবে প্রমাণ করবে। এ উম্মতের চিকিৎসা হলো ইসলামের দাওয়াত। রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের অভিজ্ঞতাপূর্ণ বক্তব্য যে, যে নেতা কেবল নিজের ভোটের নিরাপত্তার চিন্তা করে, সে নিজের ক্ষমতা ও অবস্থানকে বাঁচাতে পারে না বরং উত্তম ও সফল ওই রাজনীতিবিদ যিনি অপর গোত্র ও দলের ভোট কেটে নিজের দলে শামিল করার চিন্তা করেন। অনুরূপভাবে যে শাসক কেবল নিজের দেশের সীমান্ত রক্ষার চিন্তা করে, ধীরে ধীরে সে নিজের রাজ্যও হারিয়ে বসে। এর বিপরীতে যে শাসক নিজ রাজ্যকে বর্ধিত করার চিন্তা করে এবং অতিরিক্ত এলাকা দখল করার উদ্দেশে সচেষ্ট থাকে যদি সে নিজ রাজ্য ও রাজত্ব বৃদ্ধি করতে নাও পারে কমপক্ষে নিজ রাজ্য অবশ্যই নিরাপদ থাকবে।
এই বিবেচনায়ও মুসলিম উম্মতের স্থায়িত্ব ও নেতৃত্বের জন্য এটা আবশ্যক যে, নিজ মুসলমান ভাইয়ের উপর মেহনত করে তাদের ঈমান ও ইসলামের ওপর দৃঢ় অবস্থানে স্থির রাখার চিন্তাই কেবল নয়, অপরাপর সম্প্রদায়কেও ইসলামের দাওয়াত দিয়ে নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধির চেষ্টা করবে। মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি সদস্যকে ধর্মহীনতা থেকে বাঁচানোর ফিকির ও প্রশিক্ষণের গুরুত্ব কোনোক্রমেই কম নয়। কিন্তু কেবল এটাকেই উদ্দেশ্য ধরে নেয়া কখনই যথেষ্ট হতে পারে না, বরং মুসলিম উম্মাহর ঈমানকে দৃঢ় করার জন্য এবং ধর্মীয় জাগরণের জন্য অন্যদের মাঝে দাওয়াতী কাজ করাও অত্যন্ত জরুরি।
এ পর্যন্ত বর্ণিত বিস্তৃত বিবরণে এ কথা সুস্পষ্ট হয়েছে যে, সর্বপ্রকারের চিন্তা অনুসারে মুসলিম উম্মাহর সকল সমস্যার সমাধান কেবল এবং একমাত্র ইসলামের দাওয়াত। কিন্তু পার্থিব সমস্যা সমাধানের জন্য দাওয়াত দেয়া না উপকারী, না ফলপ্রসূ, আর না প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্য। আমাদের তো নিজেদের সম্পর্ক মহান রব এর সাথে দৃঢ় করার ও দয়ালু অভিভাবক রাসুল এর অনুগ্রহকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার এবং নিজের আত্মার সম্পর্ক তাঁর সাথে সম্পৃক্ত করার উদ্দেশ্যেই দাওয়াতের কাজকে হৃদয়ে ধারণ করা উচিত।