
ইসলামে ভাষার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব মো. আবু তালহা তারীফ
১৯৫২ সালর ২১ শে ফেব্রুয়ারী ছাত্র জনতার অধিকার রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বিক্ষোভ করে। তখন বিক্ষোভরত ছাত্রদের ওপর গুলি চালায় পাকিস্তানি পুলিশ। এতে সালাম, রফিক, জব্বার, শফিকসহ বেশ কয়েকজন ছাত্র বুকের তাজা রক্ত দিয়ে শহিদ হন। অন্যের হাতে অন্যায় ভাবে মৃত্যুবরন করেছেন তারা। যাদের অন্যায় ভাবে হত্যা করা হয় তারা শহীদ। ইসলামের আলোচনা অনুযায়ী ভাষার জন্য যারা প্রান দিয়েছেন তারা শহীদ। শহীদদের মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে ঋন ব্যতিত শহীদদের সকল গুনাহ আল্লাহ তায়ালা মাপ করে দিবেন। যেহেতু তাদের আন্দোলন ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের যুদ্ধ। পূর্ব বাংলার অধিকাংশ মানুষের ভাষা ছিল বাংলা কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগন জোর করে এদেশের মানুষের উপর উর্দু ভাষা চাপিয়ে দিচ্ছিলেন। তখন তারা ন্যায় অধিকারের জন্য স্পষ্ট দাবি করেছিল। আর এটাই জিহাদ। রাসুল (স:) বলেছেন, “অত্যাচারি শাসকের বিরুদ্ধে হক তথা সঠিক কথা বলা অথ্যাৎ ন্যায় অধিকার প্রদান করার ষ্পষ্ট দাবী করাই শ্রেষ্ঠ জিহাদ”। (তিরমিযীআবু ঈসা মুহাম্মদ ইবনে ঈসা,আস-সুনান, খ, ৪পৃ. ৪৭১, হাদীস নং-২১৭৪)
১২০৩ সালে তুর্কিবীর ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির বাংলা বিজয়ের মাধ্যে দিয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। একসময় হিন্দু পুরিহিতরা প্রচার করত যে বাংলায় কথা বলবে সে নরকে যাবে। তাছারা বৃটিশরা তাদের নিজস্ব ভাষা ও সাংস্কৃতি এতদাঞ্চলে চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল । কিন্তু বাঙালী মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, নির্বিশেষে সকল ধর্মের বুদ্ধিজীবিরা সে নিষেধাজ্ঞা এবং ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে বাংলা ভাষায় বিবিধ সাহিত্য রচনা করে এ ভাষায় বিবিধ রতনে সমৃদ্ধ করে। সর্বোপরি ১৯৪৭ সালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান মিলে স্বাধীন পাকিস্তানের জন্ম হয়। এ সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার শীর্ষে থাকা পশ্চিম পাকিস্তানের বাঙ্গালিরা এর বিরোধিতা করে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন এ দেশের ছাত্র জনতা। তারা অধিকার বঞ্চিত হন বিধায় তারা অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করেন। যারা অধিকার বঞ্চিত তাদের অধিকার আদায় করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যাদের লড়াই করতে বাধ্য করা হয়েছে তাদের নির্দেশ করা দেওয়া গেল এ জন্য যে তারা অধিকার বঞ্চিত নিপীড়িত হয়েছে”। (সূরা হজ্জ-৩৯)
ড. শহিদুল্লাহর মতে, বর্তমানে বিশ্বে ভাষার সংখ্যা ২৭৯৬ টি। ভাব প্রকাশের যতগুলো বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আছে তার সবাটাই সকল মানুষের মাঝে একই রকম। বিভিন্ন কোকিলের সুরে যেমন সাদৃশ্য পাওয়া যায় তেমনি বিভন্ন মানুষের সুরে ভাষায় ও সাদৃশ্য পাওয়া যায়না। তাছারা পরিবেশ পরিস্থিতি তথা আবহাওয়াজনিত কারনে বাকবিন্যাস বিচিত্রতা ও দৃষ্টিভঙ্গিও বিভন্নতার প্রেক্ষাপটে ভাষায় বিভন্নতা আহরহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বেও মানুষের মাঝে ভাষার বিভন্নতা ও বৈচিত্র্যকে রয়েছে। এ বৈচিত্র্য মানুষের হাতে গড়া নয় এটা আল্লাহ পাকের সৃষ্টিকুলে এক রহস্যময় নিদর্শন সরুপ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর তার নিদর্শনাবলীর অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্নেও বৈচিত্র। নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে বহু নিদর্শন”। (সূরা রুম-২১)
বাংলাভাষার জন্য যে আত্তত্যাগ করেছেন পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। সম্পদের জন্য, ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দেশে দেশে লড়াই করে, কিন্তু মাতৃভাষার জন্য লড়াইয়ের ইতিহাস শুধু বাঙালিরা তৈরি করেছে। যারা শহীদ হয়েছে তাদের জন্য নির্দিষ্ট একদিন খালি পায়ে হেটে সন্মান প্রদর্শন করার জন্য শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরবর্তীতে তাদের স্বরন খুব কম পড়ে। তাদের জন্য করা হয়না কোন দোয়া। সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়না তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হওয়া ভাষা। ভাষা শুদ্ধভাবে বলা ও লিখতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ন। রাসুল (স:) বিশুদ্ধ মাতৃভাষায় কথা বলেছেন। তার আলোচনা এবং বচনভঙ্গি ছিল অতুলনীয়। তিনি ছিলেন ভাষা ও সাহিত্যে সর্বাধিক নৈপুন্যের অধিকারী এবং আরবের সবচেয়ে নুন্দর বিশুদ্ধ ভাষী। রাসুল(স:) বলেন,“তোমরা তিনটি কারনে আরব তথা আরবি ভাষীকে ভালবাসবে কেননা আমার ভাষা, কুরআনের ভাষা এবং জান্নাতের ভাষা”। (বায়হাকী)
