সরকারের উন্নয়নের সাফল্যকে ম্লান করে দেয় ওরাই
অর্থনৈতিক অঙ্গনে অনেক অনেক অর্জন বাংলাদেশকে আরও অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে, নিঃসন্দেহে। উন্নয়নের সাফল্য-কাহিনী কি ধরে রাখা সম্ভব হবে? গভীর চিন্তার বিষয়। সমাজের মানুষের সঙ্গে যারা মেলামেশা করেন, তারা বলতে পারবেন আসলে সাধারণ মানুষ কী ভাবছেন। সব সূচকে উল্লম্ফণ থাকলেও জনমানুষের জীবনে দৃশ্যমান প্রভাব কতটুকু পড়েছে? বিগত ৯ বছরে প্রায় দুই কোটি কর্মসংস্থান হলেও কর্মহীন লোকজনের লাইনের দৈর্ঘ্য তেমন কমছে কী? দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির লাগামটা টানবে কে? রাজনীতির সম্ভাব্য উত্তপ্ত আকাশে বৃষ্টি ঝরাবে কে? ঘাপটি মেরে বসে থাকা ২০১৪ সালের বোমাবাজরা নির্বাচনের সরব বছর ২০১৮ সাল এবং পরবর্তী বছরগুলোকে শান্তিপূর্ণ ও মসৃণ থাকতে দিবে কী? গণতান্ত্রিক মানসিকতা নিয়ে প্রশাসনের কর্তাবক্তিরা এসব সামাল দেওয়ার জন্য সক্ষমতা বাড়াচ্ছেন কী? জনমনে এরূপ প্রশ্ন থাকাটাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিক। বাংলার মানুষকে এখন কল্পিত জ্বীনে-ভূতে ধরে না। কিন্তু চেপে ধরে ক্ষমতাশীন দলের নাম-ভাঙানো কিছু দলীয় হাইব্রিড সমর্থক ও দল-বহির্ভূত স্বার্থান্ধগোষ্ঠীর অনৈতিক-সহিংস কার্যকলাপ। এরা নিবেদিত দলীয় কর্মীদের কনুই’র গুতা দিয়ে পাশে ঠেলে ফেলে দেয়, মন্ত্রী-এমপিদের দিকে তর্জনি উঁচিয়ে কথা বলে, মনমতো সুযোগ-সুবিধা না পেলে সরকারি কর্মকর্তাদের উপর হামলা করে, প্রভাব খাটিয়ে সৎ কর্মকর্তাদের ওএসডি বানিয়ে মনের ঝাল মেটায়, উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ নয়-ছয় করে। সংখ্যায় অল্প হলেও এরা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে সরকারের ভাবমূর্তির বারোটা বাজায়। এরা চর-নদী দখল করে, মাদকের চোরাচালানি করে, নারী-শিশু পাচার করে, জালমুদ্রার ব্যবসা করে, নিরীহ লোকের জমি দখল করে, চাল মজুদদারি করে, রাস্তাঘাট অচল করে দিয়ে সরকারের নিকট থেকে অন্যায্য দাবি আদায় করে নেয়, বাজার-সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের বাজারে বিষবাষ্প ছড়ায় আর পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যায়। অদমিত নৈরাজ্যের নায়কেরা একটুতেই রাস্তায় গণপরিবহন ধর্মঘট ডেকে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করে, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে, ব্যাংকের মূলধন-আমানত সব বিনা বাধায় লোপাট করে দেয়, শেয়ারবাজার অস্থিতিশীল করে আপন স্বার্থ পরিপূরণ করে, প্রশ্ন ফাঁস করে শিক্ষাব্যবস্থায় ধস নামিয়ে দিয়ে সরকারকে নাকানি-চুবানি খাওয়ায়। দলের ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা মতলববাজ চক্রের মদদপ্রাপ্ত এসব কুশীলবদের কারণে খাদ্যে ভেজালের দৌরাত্ম্য বাড়ে, ফরমালিন-কার্বাইডে মাছ-মাংস-ফল বিষাক্ত হয়, কীটনাশক আর ভেজাল ঔষধ জীবন নাশ করে, ঘুষখোর-দুর্নীতিবাজরা আশকারা পেয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়, পাহাড়-পাথর-বন কেটে পরিবেশ-বৈচিত্র্য বিনষ্ট করে, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর লুট করে আর সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অবক্ষয়ের বিষ ঢুকিয়ে দেয়। নির্বাচনের বছরে এদের ব্যাপারে কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প আছে বলে মনে হয় না।
লেখক : ব্যবস্থাপনাবিদ ও গবেষক; উপাচার্য, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়