মুহাম্মাদ আবু আখতার
কুরআন মাজীদ আল্লাহ তায়ালার নাজিলকৃত শ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব। এ কিতাব যেমন মর্যাদার দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ তেমনি এর তিলাওয়াতের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। বর্তমান মুসলিম সমাজে এ গুরুত্বপূর্ণ নেক আমলের ব্যাপারে অনেকের মাঝে চরম উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। কুরআন শিক্ষাকে অনেকে হেয় চোখে দেখে। তাই তারা নিজেরা কুরআন শিখতে এবং অধীনস্থ সন্তানদেরকে কুরআন শিক্ষাদানে আগ্রহবোধ করে না। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) কুরআন শিক্ষাকারী ও শিক্ষাদানকারীকে সর্বোত্তম ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করেছেন। হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ঐ ব্যক্তি যে নিজে কুরআন শিখে ও অপরকে শিক্ষা দেয়। (বুখারি: ৫?২৭)
কুরআন তিলাওয়াত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর দ্বারা অনেক নেকী হাসিল করা যায়। এ দুনিয়াতে নেকীর মূল্য বুঝতে না পারায় কুরআন তিলাওয়াতে আমরা অবহেলা করি। কিন্তু যখন নেকীর মূল্য আমাদের বুঝে আসবে তখন কুরআন তিলাওয়াতে অবহেলা করার কারণে আফসোস করে কোন লাভ হবে না। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব (কুরআন মাজীদ)এর একটি হরফ পাঠ করবে, তার একটি নেকী হবে। আর একটি নেকী দশটি নেকীর সমান হয়। আমি বলছি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ; বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ। (অর্থাৎ তিনটি হরফ দ্বারা গঠিত ‘আলিফ-লাম-মীম, যার নেকীর সংখ্যা হবে ত্রিশ।) ( তিরমিজি: ২৯১০)
কুরআন কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর নাজাতের জন্য সুপারিশ করবে। হজরত আবূ উমামাহ (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, তোমরা কুরআন মাজীদ পাঠ কর। কেননা, কিয়ামতের দিন কুরআন, তার পাঠকের জন্য সুপারিশ-কারী হিসাবে আগমন করবে। (আহমাদ: ২১৬৪২)
কুরআন তিলাওয়াতের ফলে সাকীনা বা প্রশান্তি নাযিল হয়। হজরত বারা’ ইবনে আজিব (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা একটি লোক সূরা কাহাফ পাঠ করছিল। তার পাশেই দুটো রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। ইতোমধ্যে লোকটিকে একটি মেঘে ঢেকে নিলো। মেঘটি লোকটির নিকটবর্তী হতে থাকলে ঘোড়াটি তা দেখে চমকাতে আরম্ভ করল। অতঃপর যখন সকাল হলো তখন লোকটি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকটে হাজির হয়ে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করল। তা (শুনে) তিনি বললেন, ওটি প্রশান্তি ছিল, যা তোমার কুরআন পড়ার দরুন অবতীর্ণ হয়েছে। (বুখারি)
কুরআন তিলাওয়াতে কষ্টের জন্যও দ্বিগুণ নেকী। তাই কষ্টের কারণে তিলাওয়াত ছেড়ে দেয়া ঠিক নয়। হজরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, কুরআনের তিলাওয়াতকারী হাফেজ মহাসম্মানিত পুণ্যবান লিপিকার (ফেরেশতাবর্গের) সঙ্গী হবে। আর যে ব্যক্তি ( হিফজ না থাকার কারণে) কুরআন পাঠে ‘ওঁ-ওঁ’ করে এবং পড়তে কষ্টবোধ করে, তার জন্য রয়েছে দু’টি নেকী। (একটি তেলাওয়াতের জন্য ও দ্বিতীয়টি কষ্টের জন্য।) (বুখারিঃ ৪৯৩৭)