ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সমাধান দিতেন ক্যামব্রিজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক
সুজন কৈরী : রাজধানীর উত্তরখান ও গাজীপুর এলাকা থেকে এসএসসি প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত ৪ শিক্ষকসহ ৫ জনকে আটক করেছে র্যাব। তারা হলেন হাসানুর রহমান ওরফে রকি ভাই (২৯), মো. সজীব মিয়া (২৬), মো. এনামুল হক (২৭), মো. ইব্রাহিম (২১) ও তানভীর হোসেন (২৯)। তাদের কাছ থেকে ৮টি মোবাইল সেট ও ১টি ট্যাব উদ্ধার করা হয়। ট্যাবে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের ভেতরে এসএসসি পরীক্ষার বিভিন্ন প্রশ্নপত্র পাওয়া গেছে। আটককৃতদের মধ্যে সজীব মিয়া উত্তরখানের ক্যামব্রিজ হাইস্কুলের অ্যাকাউন্টিং বিষয়ের শিক্ষক, ইব্রাহিম এবং এনামুল সৃজনশীল কোচিং সেন্টারের শিক্ষক। এছাড়া তানভীর ক্যামব্রিজ স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। র্যাবের দাবি, তানভীর ফাঁস হওয়া প্রশ্ন নিয়ে দ্রুত সমাধান করে দিতেন। এছাড়া রকি ভাই গত চারবছর ধরে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জাড়িত। চলতি বছরে এসএসসির ফাঁস হওয়া প্রত্যেকটি রকি ভাই করেছে। তাছাড়া পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার আলোচনা থাকলেও পরীক্ষার দিন আনুমানিক সকাল ৮টার দিকে সমাধানসহ প্রশ্ন ফাঁস হয় বলেও জানিয়েছে র্যাব। গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানায় র্যাব। এদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায়ে ধামরাইয়ে দুই পরীক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ ও কুমিল্লায় ২ যুবককে জেলে পাঠিয়েছেন আদালত।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, হাসানুর রহমান ওরফে রকি ভাই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তার ফেসবুক আইডি ‘রকি ভাই’। প্রশ্নপত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে তার বেশ খ্যাতি আছে। সে ফেসবুক গ্রুপের এডমিন। গত ৪ বছর ধরে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত সে। গ্রেফতারকৃত হাসান পরীক্ষা শুরু হওয়ার ২ মাস আগে থেকেই ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, ইমোতে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফার নম্বর আইডি দিয়ে প্রচারণা করতে শুরু করে।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ফাঁস হওয়া প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে আটককৃতরা। তারা ব্লাড ডোনেশন-১, ব্লাড ডোনেশন-২, ব্লাড ডোনেশন-৩ ও মজা নামের গ্রুপ খুলে, যাতে কেউ একে প্রশ্নফাঁসের গ্রুপ মনে না করতে পারে।
এদিকে আমাদের আশুলিয়া প্রতিনিধি সোহেল মুহাম্মদ জানান, ধামরাই হার্ডিঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশের আগে মোবাইল ফোনে প্রশ্নপত্র পাওয়ায় দুই ছাত্র-ছাত্রীকে আটক করেন ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল কালাম আজাদ। তাদের কাছে থাকা মোবাইল ফোনে জীববিজ্ঞান পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাওয়া গেছে, যার সঙ্গে পরীক্ষার মূল প্রশ্নের হুবহু মিল রয়েছে ও সমাধানও দেওয়া আছে। তারা আশুলিয়ার শিমুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পরে দুই পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় পাঠানো হয়।
অপরদিকে আমাদের কুমিল্লা প্রতিনিধি তারিকুল ইসলাম শিবলী জানান, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে কুমিল্লার চান্দিনায় দুই যুবককে দুই বছর করে কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত। গতকাল জীববিজ্ঞান পরীক্ষা চলাকালে চান্দিনার ডা. ফিরোজা আহমেদ খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে শাহরিয়ার ও ফুয়াদ নামে বহিরাগত দুই যুবককে আটক করে সাজা দেয়া হয়। সম্পাদনা : এনামুল হক