জাস্টিন ট্রুডোর ভারত সফর কী ‘অবজ্ঞা’য় পর্যবসিত?
মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো যে দেশেই গেছেন, তাকে নিয়ে আগ্রহের কমতি ঘটেনি। অথচ এ সময়ে এক সপ্তাহের জন্য তার সপরিবারে ভারত সফরটি যেন ‘নিরুত্তাপ’ প্রকৃতির বলেই সূচিত। এখানকার স্থানীয় টেলিভিশন ‘সিটি পাল্স’ বা সিপি টুয়েন্টি ফোরের নিউজে ঐতিহ্যবাহী তাজমহল সফরের ছবি দিয়েই খবরটি প্রচারিত হয়েছে। জাতীয় সংবাদ মাধ্যম ‘কানাডিয়ান প্রেস’ সেটির উৎস হলেও যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম বিবিসি সেক্ষেত্রে ভিন্ন দৃষ্টিপান তুলে ধরেছে। কারণ, ভারতের সরকারি মহলে এ নিয়ে সরগরম উষ্ণতা নাকি দেখা যায়নি। কেউ কেউ সেটিকে ‘অবজ্ঞা’ প্রদর্শন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।
দৃশ্যত, বিমানবন্দরে অবতরণের পর তাকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পরিবর্তে একজন কনিষ্ঠ মন্ত্রী অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। সে কারণে অনলাইন বিবিসি মন্তব্য করেছে, তাজমহল পরিদর্শন দিয়ে তার সফরে প্রচুর ছবি তোলার সুযোগ সত্ত্বেও ভারত সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা তা গ্রহণ করেননি। অথচ অতীতে প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজে অনেককেই বিমানবন্দরে অর্ভ্যথনা জানিয়েছেন। সর্বশেষ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকেও সাদরে বরণ করেছেন।
তাহলে ভারত কি জাস্টিন ট্রুডোর প্রতি সত্যি ‘অবজ্ঞা’ প্রদর্শন করেছে, করলে তার কারণটি কী? এই প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় কলাম লেখক ও অর্থনীতিবিদ বিবেক দেহেজিয়া একমত হয়েছেন। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, ‘এটা বড় ধরনের অবজ্ঞা’। বিষয়টি খোলাসা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এই কম উষ্ণতা দেখানোর পেছনে ট্রুডোর মন্ত্রিপরিষদে ৪ জন শিখ মন্ত্রী রয়েছেন, যাদের সঙ্গে ভারতের শিখ স্বাধীনতা আন্দোলন ‘খালিস্তান মুভমেন্ট’ নেতাদের সম্পৃক্তি রয়েছে। ১৯৮৫ সালে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে বোমা হামলায় ৩২৯ জনের মৃত্যুর ঘটনায় কানাডার একজন শিখ জড়িত। এতেই এই ঘটনাপ্রবাহের শেষ নয়। গত বছর এপ্রিলে ‘খালিস্তানিদের প্রতি সহানুভূতির কারণে’ কানাডার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হারজিত সাজ্জানের সঙ্গে দেখা দেননি পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী। যদিও কানাডায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিষ্ণু প্রকাশ ট্রুডোর সফরকে ঘিরে বলেছেন, ‘অবজ্ঞা নয়’, বরং কূটনৈতিক শিষ্টাচারটি মেনে চলা হয়েছে এবং উভয় প্রধানমন্ত্রী ২৩ ফেব্রুয়ারি মিলিত হচ্ছেন। পাশাপাশি সাবেক কূটনীতিক কানওয়াল সিবাল বিবিসিকে বলেছেন, শুধু অনুমাননির্ভর হয়ে খালিস্তানি ইস্যুতে ট্রুডোর রাষ্ট্রীয় সফর নিয়ে ভারতের এই আচরণ রাজনৈতিক ও পেশাদারিত্বের বিবেচনায় ‘ভুল’, বরং ভারত তা উত্থাপন করতে পারত। তার মতে, বিষয়টি ‘অবজ্ঞা’ নয়, কারণ উভয় দেশ বিগত কয়েক বছরে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নাটকীয় উন্নয়ন ঘটিয়েছে। দ্বিপাক্ষিক পরমাণু চুক্তি তার অন্যতম। বস্তুত ট্রুডোর সফরের সফলতায় উভয় দেশের স্বার্থ অঙ্গাঅঙ্গিভাবে সম্পৃক্ত।
তাই দেখার বিষয়, আদৌ প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ভারত সফর ‘অবজ্ঞা’র পরিবর্তে সফলতার সোপান রচনা করছে কিনা?
ই-মেইল: [email protected]