কাবা ঘরের মর্যাদা
মো: আবু তালহা তারীফ
পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র ও মর্যাদা সম্পন্ন ঘর হচ্ছে কাবা ঘর । এ ঘরের দিকেই তাকিয়ে থাকে সারা বিশ্ব মুসলিম। এ ঘরকেই কেন্দ্র করে সারা বিশ্বের মুসলিমরা নামাজ আদায় করে। যারা আল¬াহর মেহমান হয়ে হজ্জ করতে যায় তারা অধিক আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে, কখন দেখবো পৃথিবীর কেন্দ্রেবিন্দুতে অবস্থিত কালো গিলাফ ঢাকা পবিত্র কাবা শরিফ। পবিত্র কাবা শরীফকে কেন্দ্র ধারন করে পৃথিবী ঘূর্ণয়মান রয়েছে। কাবা শরিফে নামাজ পড়ার সাওয়াব সাধারণ মসজিদের তুলনায় এক লাখগুণ বেশি।
কাবা শরিফে মহান ¯্রষ্টার উদ্দেশ্যে মস্তক অবনত করে সিজদা করার সময় মনে হয় এটাই সে স্থান যা পৃথিবীর কেন্দ্রে বিন্দু হিসেবে পরিচিত। পবিত্র কাবা মহান আল¬াহ তায়ালার ঘর এবং কাবা একটি নিরাপদ স্থান। এখানে মানুষ পশু এবং গাছপালা সব ধরনের অনিষ্টা থেকে মুক্ত।
মহান আল¬াহ তায়ালা বলেন, “ওরা কি দেখে না আমি হারামকে (কাবার চতুষ্পার্শ্বস্থ নির্ধারিত এলাকাকে হারম বলা হয়) নিরাপদ স্থান করেছি অথচ এর চারদিকে যেসব মানুষ অঅছে তাদের উপর হামলা করা হয়, তবে কি ওরা মিথ্যাতেই বিশ্বাস করবে এবং আল¬াহর অনুগ্রহ অস্বীকার করবে”।(সূরা আনকাবুত-৬৭)
পবিত্র কাবা শরীফের মর্যাদা অত্যাধিক। পবিত্র কাবার দিকে দৃষ্টিপাত করা একটি ইবাদত। হাদিস শরীফে আছে কাবার দিকে নজর দেওয়া এক প্রকার ইবাদত।“রাসুল (স:) বলেন, প্রতিটি দিন ও রাতে এ ঘরের ওপর ১২০ টি রহমত নাযিল হয়। এরমধ্যে ৬০টি তাওয়াফকারীদের জন্য,৪০ টি ইতিকাফ কারীদের জন্য এব ২০টি কাবার প্রতি দৃষ্টিপাত কারীদের জন্য”। (তাবরানী) পবিত্র কাবা ঘরের উচ্চতা ১৫ মিটার এর দৈর্ঘ্য ১২ মিটার এবং এর প্রস্থ ১০মিটার। একটি সমতল ক্ষেত্রের মাঝখানে অবস্থিত এ ঘরের চারদিকে রয়েছে মসজিদুল হারাম। এই ঘর খুব সাদামাটা ও জাকজমকহীন হওয়া সত্বেও এই ঘর দেখতে খুবই আকর্শনীয়।
পবিত্র কাবা শরিফে রয়েছে বরকত এবং বিশ্ব জগতের দিশারী। মহান আল¬াহতায়ালা বলেন, “কাবার মর্যাদা বৈশিষ্ট ও গুরুত্ব সম্পর্কে আল¬াহ তায়ালা বলেন, মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয় তা বাক্কায় (মক্বার অপর নাম বাক্কা) এটা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারী। এতে অনেক সুষ্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে (যেমন, মাকামে ইব্রাহিম এবং যে কেউ সেখানে প্রবেশকরে সে নিরাপদ। মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল¬াহর উদ্দেশ্য ওই গৃহে গিয়ে হজ্জ করা তার ওপর ফরজ এবং কেউ তা প্রত্যাখান করল সে জেনে রাখুক আল¬াহ তায়ালা বিশ্ব জগতের কারো মুখাপেক্ষী নন”।(সূরা আল ইমরান-৯৬-৯৭)
পবিত্র কাবা শরীফ এর মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরসীম। কাবা শরীফে নিকটবর্তী হলে আল¬াহ তায়ালা তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি আল¬াহর ঘরে প্রবেশ করে, সে নেক ও কল্যাণের মধ্যে প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে যখন বের হয় তখন গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রাপ্ত হয়ে বের হয়”(বায়হাকী)। রাসুল (সা.) আরও বলেন,“যে ব্যক্তি হিসাব করে এক সপ্তাহব্যাপি কাবা শরীফ তাওয়াফ করে সে একটি গোলাম আযাদ করার সমান সাওয়াব পাবে। তিনি আরো বলেন, ব্যক্তির প্রতিটি কদম উঠানো ও নামানোর দ্বারা তার একটি করে গুনাহ মাপ মাফ হয় এবং একটি নেকী লেখা হয়”।(তিরমিযি)
কাবা শরীফ তাওয়াফ করলে শিশুর মত নিস্পাপ হয়ে যায়। রাসুল (সা.) বলেন,“যে ব্যক্তি ৫০ বার বাইতুল¬াহ তাওয়াফ করে সে সদ্যভূমিষ্ট নিস্পাপ শিশুর মত পাপমুক্ত হয়ে যায়”।(তিরমিযি) কাবা শরীফের মর্যাদা এত বেশি যে মর্যাদার কারণে এর দিকে মুখ করে পা পিছনে ফিরে টয়লেট করা সম্পূর্ন হারাম। চাই শূন্য ময়দানে হোক বা ঘরের ভিতরে হোক। মোট কথা কাবার মর্যাদা অনেক বেশী। তাই কাবার দিকে পা ছড়িয়ে বসা বা এর দিকে পিক ফেলা উভয়ই মাকরুহ। কাবার মর্যাদার জন্য প্রতিবছর একে রেশমি সুতার দামি গেলাফ পরানো হয়। কাবার প্রতি যথার্থ সন্মান দেখানো সকলের জন্য অবশ্য কর্তব্য। (সূত্র: তানবীরুল কোরআন)