![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)
পর্দা উপাখ্যান ও কলেজজীবনের বাস্তবতা
তামান্না তাসনিম
অন্য দিনগুলোর চেয়ে সেদিনটা ছিলো আমার জীবনে একটু আলাদা। প্রথম হাত-পা মোজাসহ বোরকা পরে কলেজগেটে পা বাড়ালাম। তখনই দারোয়ান মামা চেঁচিয়ে বললোÑ‘এই, আপনি কে? কলেজকার্ড দেখিয়ে সেদিনের মতো রক্ষে পেলাম। তারপর সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলাম নিজের মতো করেই। হঠাৎ আশপাশে তাকিয়ে দেখলাম, পুরো কলেজের মেয়েরা এলিয়েন দেখার মতো আমায় দেখছে। কিছুক্ষণেরর জন্য নিজেকে এলিয়েন মনে হলেও তড়িঘড়ি সামলে নিলাম। ক্লাসরুমে প্রবেশে তেমন একটা বাধা না হলেও রীতিমতো ক্লাসরুমে হৈচৈ পড়ে গেলোÑ‘এটা আবার কোন জঙ্গি এলো।’ পরিচিত কয়েকটা মেয়ে তো মুখের ওপর জিজ্ঞেস করে বসলোÑ‘কীরে! হুজুর হয়েছিস কবে থেকে? তোকে দেখে তো মনে হচ্ছে মাদরাসার কোনো আন্টি এসেছে আমাদের মাঝে।’ কথাটা সামান্য আঘাত দিলেও কাউকে বুঝতে দিইনি। তখন এতোটুকুনই বললামÑ‘পর্দা আর বোরকা কী শুধু মাদরাসার মেয়েদের জন্য?’ ওরা একজন আরেকজনের দিকে তাকাতাকি করে একটু মুখ বাঁকালো। এরপর উপহাসের ছলে বললোÑ‘না, তা হবে কেনো! কিন্তু কলেজপড়ুয়া মেয়ে এমন হবে, এটা কেনো যেনো মানতে পারি না।’ সেদিনের মতো ক্লাস করে চলে এলাম। এরপর থেকে তেমন একটা ক্লাসে যেতে ভালো লাগতো না। এর কিছুদিন পরেই শুরু হলো অনার্স প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা। প্রথম পরীক্ষার দিন স্যার সবাইকে বললেনÑ‘এই মেয়েরা! সবাই কানসহ মুখের নিকাব খুলে বসো।’ আমি তার কথা কানে না নিয়েই নিজের মতো করে লিখতে শুরু করলাম। হঠাৎ এক স্যার এসে বললেনÑ‘কী ব্যাপার! কথা কী কানে যাচ্ছে না? মুখ খুলো।’ আমি তখনও চুপ করে থাকলাম। আর মনে মনে আল্লাহর সাহায্য চাইতে থাকলাম। তবে শেষ পর্যন্ত কেউ আমার নিকাব খুলতে পারেনি। আলহামদুলিল্লাহ। এভাবে রোজকার পরীক্ষায়ই একই কাহিনি ঘটলো? আর আমিও আমার মতো করে চলতে থাকলাম। আমার পরীক্ষার সময়টায় প্রচুর গরম ছিলো। এক মেয়ে বললোÑ‘এই মেয়ে! তোমার গরম-টরম লাগে না নাকি? ভূতের মতো কী একটা পরে আছো। তোমাকে দেখলেই গরম লাগে আমাদের। যত্তোসব।’ শেষ পরীক্ষার দিন পরীক্ষার হলে একজন ম্যাম এলেন। এসেই প্রথমে আমায় ধরলেনÑ‘এই মেয়ে! পরীক্ষার নিয়ম জানো না? নিকাব খুলে বসো। তোমাদের মতো মেয়েরাই নকল করে বেশি। দেখি দেখি, নকল এনেছো কিনা!’ ম্যাম চেক করলেন। কিন্তু কিছুই মিললো না তেমন। এরপর পুরো চারটে ঘণ্টা আমার পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন। কিছুদিন আগে এক আন্টির বাসায় দাওয়াত ছিলো আমাদের বাসার সবাইকে। সেখানে গিয়েও আন্টির নজর পড়লো আমার বোরকার ওপর। একগাদা কথা শোনালেন তিনি? বললেনÑ‘এই বয়সেই এতো হুজুর হতে বলেছে কে তোমারে? একদিন আসরের নামাজ শেষ করে মাত্র জায়নামাজ গুটাবো, ঠিক তখন বাড়িঅলি এলেন একজন অচেনা পুরুষ নিয়ে। ঢুকেই বললেনÑ‘একটু এদিকে এসো তো, আমার সঙ্গে এক ভদ্রলোক এসেছেন। তোমাকে একটু দেখবেন তিনি। আমি কিছুটা বেঁকে বসলাম? আন্টি বললেনÑ‘তাড়াতাড়ি এসো তো! বললামÑ‘আমি যাবো না উনার সামনে। আপনি বলে দিন। আন্টি তখন আমায় বোঝাতে লাগলেনÑ‘আরে মা শোনো! তুমি সামনে গেলে তো তোমার গুনাহ হবে না। ওই লোকের গুনাহ হবে তোমার দিকে তাকালে।’ আমি রীতিমতো আন্টিকে বোঝানোর ভাষা হারিয়ে ফেললাম। তার এমন হাস্যকর কথা শুনে অনেক কষ্টে সেদিন মাগরিব পর্যন্ত লুকিয়ে থাকলাম ছাদে গিয়ে। তারপর তারা বাধ্য হয়ে চলে গেলো।
শিক্ষার্থী : রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, শেখ ফজিলাতুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, গোপালগঞ্জ।
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)