
মহান সাধু আন্তনীর জিবন্ত জিহ্বা
এলড্রিক বিশ্বাস
মানুষের জিহ্বা একটি বিশেষ অঙ্গ তার চলমান জীবদ্দশায়। পাঁচটি ইন্দ্রীয়ের মধ্যে জিহ্বা অন্যতম। পাঁচটি ইন্দ্রীয় চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, দন্ত সব মানুষের আছে। অনেকের মধ্যে সব ইন্দ্রীয় সক্রিয় আবার অনেকের মধ্যে সব ইন্দ্রীয় সচল নয়। ঈশ্বর মানুষকে পরিপূর্ণ করেছেন এসকল ইন্দ্রীয়কে যেন সুন্দরভাবে মানুষ ব্যবহার করে।
আমরা মহান সাধু আন্তনীর জীবনে দেখতে পাই তিনি পিতা ঈশ্বরের দেয়া সদগুণ মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করেছেন। তিনি মাত্র ১৭ বৎসর বয়স থেকে ঈশ্বরের কাজে নিবেদিত হয়েছিলেন এবং আমৃত্যু ঈশ্বরের রাজ্য বিস্তারে কাজ করেছেন। তিনি প্রায় একযুগ ধরে যারা ঈশ্বরের প্রতি, তাঁর একমাত্র পুত্র প্রভু যীশু খ্রিস্টের প্রতি এবং মা মারীয়ার প্রতি যাদের বিশ্বাস ছিল না তাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করেছেন বক্তিমা দিয়ে। তিনি তাঁর জিহ্বা ব্যবহার করে খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার করেছেন। তাঁর মনমুগ্ধকর কথা শুনার জন্য দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসতো তাঁর কাছে।
মহান সাধু আন্তনী প্রভু যীশু খ্রিস্টের মত অনেক আশ্চর্য কাজ করেছেন যা তার জীবদ্দশায় তাঁকে করেছে মহান। তাঁর জীবনের অনেক ঘটনা আমরা বিভিন্ন পুস্তিকা পড়ে জানতে পেরেছি এবং আজও কোন দ্রব্য হারিয়ে গেলে সাধু আন্তনীর কাছে প্রার্থনা করলে তা পাওয়া যায় বলে ভক্তদের বিশ্বাস। তার মৃত্যুর এতো বছর পরও সাধু আন্তনীর নিকট প্রার্থনা করলে ফল পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে সাধু আন্তনীর নামে প্রার্থনা হয়, তীর্থ হয়, পর্ব পালিত হয়। ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের নাগরী ধর্মপল্লীতে প্রতি বৎসর ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে সাধু আন্তনীর তীর্থ অনুষ্ঠান হয়। বরিশাল ধর্মপ্রদেশের রাজাবাড়ী গির্জায় সাধু আন্তনীর তীর্থ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে নয়দিন নভেনা হয়। এছাড়া রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বনপাড়াতে ফেব্রুয়ারী মাসের একই সময় এবং ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের বক্সনগর গির্জায়, ধরেন্ডা ধর্মপল্লীর কমলাপুর গির্জায়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আর্চ ডায়োসিসের সোনাপুর (নোয়াখালী) ধর্মপল্লীর এসবালিয়া গির্জায় ও বিভিন্ন স্থানে দলগতভাবে অলৌকিক কর্মসাধক মহান সাধু আন্তনীর পর্ব পালিত হয় ১৬ জুন তারিখে।
মহান সাধু আন্তনীর জীবনের অনেক অলৌকিক ঘটনা আছে যা লিখে শেষ করা যাবে না। তাঁর কথা গাধা শুনেছে, মাছে শুনেছে, অত্যাচারী শুনেছে। হাজার হাজার মানুষ তার হৃদয়গ্রাহী আধ্যাতিœক কথা শুনতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসতো। তিনি ক্লান্তিহীন ভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতেন। তাঁর কথায় হাজারো মানুষের মন পরিবর্তন হয়েছে। সমস্ত কিছুর অবদান তাঁর জিহ্বা। যে জন্য তাঁর দেহ মাটিতে মিশে গেলেও যে জিহ্বা দিয়ে হাজারো মানুষকে বিমোহিত করেছেন সেই জিহ্বা পচন ধরেনি। তাঁর জিহ্বা সংরক্ষিত আছে। সেই জিহ্বা যা জীবন্ত তা এসেছিল বাংলাদেশে গত জানুয়ারী ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের শেষে এবং তা প্রদর্শনীর জন্য ও শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এক সপ্তাহ। ভক্তরা তাদের কাঙ্খিত মনোবাসনা পূর্ণ করতে পেরেছে সেই জিহ্বা স্পর্শ করে। অনেকে শ্রদ্ধাভরে চুম্বন করেছে সেই জিহ্বা (কাঁচের মধ্যে ছিল) ভক্তিভরে। সাধু আন্তনীর নিকট এতোদিন যারা প্রার্থনা করেছে, মানত করেছে, যাচœা করেছে তারা সুযোগ পেয়েছিল জীবন্ত সাধু আন্তনীকে স্পর্শ করার। এই বিশেষ অনুগ্রহ লাভ ছিল হাজার হাজার খ্রিস্টভক্তের মনের আকুতির বহি:প্রকাশ।
এ বছর ফেব্রুয়ারীতে পানজোরায় সাধু আন্তনীর তীর্থের মহাখ্রিস্টযাগে মহামান্য কার্ডিনাল ও আর্চবিশপ প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, সিএসসি উপদেশে বলেছিলেন উপস্থিত হাজারো খ্রিস্টভক্তকে আমরা পানজোরায় প্রতি বছর সাধু আন্তনীর তীর্থে অংশ নেই, তিনি আজ আমাদের মাঝে উপস্থিত। জীবন্ত জিহ্বা পানজোরায় এসেছে। উল্লেখ্য ৭টি দিন সাধু আন্তনীর জীবন্ত জিহ্বা ঢাকার তেজগাঁও, হাসনাবাদ, নাগরীর পানজোরায়, চট্টগ্রাম কাথিড্রালে, বরিশালের বাজাবাড়ীতে, রাজশাহীতে হাজারো আন্তনী ভক্তের কাছে প্রদর্শন ও শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নেয়া হয়। মানুষের উপচে পড়া ভীড় ও শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে মহান সাধু আন্তনীর জীবন্ত জিহ্বার প্রতি ভক্তি ও সম্মান জানানোর দৃশ্যপট বাংলাদেশে এক অনন্য ইতিহাস হয়ে থাকবে।
সাধু আন্তনীর অলৌকিক আশির্বাদ আমাদের প্রতি অবিরত বর্ষিত হচ্ছে। তিনি মহান, তিনি আমাদের জন্য অনেক কিছু করছেন, করবেন। যাচœা করতে হবে সবসময়। ন্যায়ের পথে থাকতে হবে সমব সময়। জীবন্ত জিহ্বার শক্তি অসীম, সেই শক্তিবলে আমরা পেয়েছি ১৬ জন নতুন পুরোহিত যাঁরা গত ১ ডিসেম্বর পোপ ফ্রান্সিস কর্তৃক যাজক হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন। খ্রিস্টভক্তরা ও দেশবাসী পোপ মহােদয়কে দেখেছে। যা সাধু আন্তনীর অবিরত আশির্বাদ। তাঁর করুণাধারার আশির্বাদে আমরা শিক্ত, আমরা সকলে ধন্য।
সেই আশির্বাদের ধারাবাহিকতায় সাধু আন্তনীর স্পর্শে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ হোক শান্তিময় ও পালকীয় ভাবধারায় গতিশীল। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আর্চ ডায়োসিস এদেশে খ্রিস্টের মঙ্গলবাণী প্রচারের ৫০০ বৎসর উদ্যাপন করছে। সমস্ত কিছুই সাধু আন্তনীর আশির্বাদের ফলধারা। সৃষ্টিকর্তা পিতা ঈশ্বরের নিকট আমাদের প্রতিদিনের প্রার্থনায় মা মারীয়া, প্রভুযীশু ও সাধু আন্তনী এবং অন্যান্য সকল সাধু সাধ্বীদের নিকট আবেদন হোক দেশ, সমাজ ও পৃথিবীর শান্তি কামনা। প্রার্থনা যেন হয় আরো গতিময়। সূত্র : বিডি খ্রিস্টান নিউজ
