‘রাখাইনের খুনিদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের দাবি জানাচ্ছি’ রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে তিন নোবেলজয়ী
শ.ম.গফুর, উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি: রোহিঙ্গাদের জাতিগত নির্মূলে পরিকল্পিত গণহত্যা চালানো হচ্ছে অভিযোগ করে খুনিদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন তিন নোবেল বিজয়ী। সফররত ইরানের শিরিন এবাদি, ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান ও যুক্তরাজ্যের মরিয়েড মুগুয়ার গতকাল সোমবার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরির্দশন করে সাংবাদিকদের কাছে এ দাবি করেন।
রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিজের চোখে দেখতে নোবেল বিজয়ী এই তিন নারী রোববার কক্সবাজারে পৌঁছান। রোববার প্রথমদিন দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেন। গতকাল সোমবার সকালে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ে মোহাম্মদ আবুল
কালাম ও কক্সবাজার জেলা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিন নোবেলজয়ী যান উখিয়ার বালুখালী, থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।
২০১১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ইয়েমেনের অধিকারকর্মী তাওয়াক্কুল কারমান কুতুপালং আশ্রয় শিবির ঘুরে দেখার পর বলেন, মিয়ানমারে যা হচ্ছে তা গণহত্যা ছাড়া আর কিছু নয়। এরপরও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি চুপ থাকে, সেটা পৃথিবীর সব মানুষের জন্য লজ্জার হবে মন্তব্য করে এই নোবেল বিজয়ী বলেন, যারা এ অপরাধের জন্য দায়ী, তাদেরকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানাচ্ছি।
১৯৭৬ সালে শান্তিতে নোবেল পাওয়া মরিয়েড মুগুয়ার বলছেন, “এটা স্পষ্টভাবে স্পষ্টভাবে স্পষ্টভাবে গণহত্যা। বার্মিজ সরকার আর সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যা চালাচ্ছে, সেটা মিয়ানমার থেকে, ইতিহাস রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মুছে ফেলার পরিকল্পিত চেষ্টা।” আন্তর্জাতিক আদালতে রাখাইনের খুনিদের বিচারের দাবি জানিয়ে এই নোবেল বিজয়ী বলেন, মানুষ হিসেবে আমরা মিয়ানমার সরকারের এই নীতিকে ধিক্কার জানাই। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ভাবছে, এভাবে নরহত্যা চালিয়ে যেতে তাদের কোনো বাধা নেই। তাদের এই দায়মুক্তি বন্ধ করতে হবে।
“আমরা জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সব সংস্থাকে বলবে, এই রোহিঙ্গাদের আমরা বাংলাদেশে ফেলে রাখতে পারি না। যথেষ্ট হয়েছে! আমাদের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে, আর নীরব থাকলে চলবে না। এই হত্যাযজ্ঞ আমাদের এখনই থামাতে হবে।
২০০৩ সালে শান্তিতে নোবেল পাওয়া ইরানি নাগরিক শিরিন এবাদি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরুর পর ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও শরণার্থীদের ঢল থামছে না। বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর কারণে বাংলাদেশের মানুষের ওপরও বড় ধরনের চাপ তৈরি হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের মানুষ ও সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি। শিরিন এবাদি বলেন, মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী যেসব অপরাধ ঘটিয়েছে, তার বিচার হতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এটা নিশ্চিত করতে হবে যাতে দোষীদের আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্টে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। আর জাতিসংঘে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নতুন কোনো প্রস্তাব আনা হলে চীন বা অন্য কোনো দেশকে ভেটো না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সম্পাদনা: ইকবাল খান