
কুরআনের বিধান এবং আধুনিক বিজ্ঞান
মাহফুয আহমদ
পবিত্র কোরআন সর্বশেষ ঐশীগ্রন্থ। কোরআনের যাবতীয় শিক্ষা ও বিধান কেয়ামত অবধি মানবজাতির জন্য অবশ্যপালনীয়। গোটা মানবসমাজের সমূহ কল্যাণ পবিত্র কোরআনে নিহিত রয়েছে। কোরআনের বিধি-বিধান সর্বকালের মানবসভ্যতার জন্য জরুরি ও উপকারী। সেটা যেমন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে চিরসত্য তেমনি অভিজ্ঞতার আলোকে তা সন্দেহাতীতভাবে সাব্যস্ত এবং আধুনিক বিজ্ঞানের নিত্যনতুন আবিষ্কারের দ্বারা সুপ্রমাণিত। এজাতীয় বিধান এবং সেই বিধানের পক্ষে আধুনিকযুগের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ছোট্ট একটি দৃষ্টান্ত এখানে তুলে ধরা হলো।
ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে গান-বাজনা করা এবং শোনা হারাম ও কবিরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। তা যে কোনো গানই হোক না কেন। যেমন- নবীতত্ত্ব, মুর্শীদি, জারি, কাওয়ালি, পল্লীগীতি, ভাওয়ালী, ভক্তিমূলক ইত্যাদি যেকোনো প্রকার গানই হোক না কেন। তবে বাজনা বা বাদ্য-যন্ত্র ব্যতীত আল্লাহ তায়ালার গুণাবলী বিষয়ে হামদ, না’ত, কাসিদা, গজল ইত্যাদি পাঠ করা ও শোনা জায়েয রয়েছে।
গান-বাজনা হারাম হওয়া সম্পর্কিত কোরআনের স্পষ্ট বিধান রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর একশ্রেণীর লোক আছে, যারা অজ্ঞতাবশত খেল-তামাশার বস্তু ক্রয় করে বান্দাকে আল্লাহর পথ থেকে গাফেল করার জন্য।’ (সূরা লোকমান: ৬)
এ আয়াতের শানে নুযূলে বলা হয়েছে যে, নযর ইবনে হারিস বিদেশ থেকে একটি গায়িকা বাঁদী খরিদ করে এনে তাকে গান-বাজনায় নিয়োজিত করল। কেউ কোরআন শ্রবণের ইচ্ছা করলে তাকে গান শোনানোর জন্য সে গায়িকাকে আদেশ করত এবং বলত মুহাম্মদ তোমাদেরকে কোরআন শুনিয়ে নামায, রোযা এবং ধর্মের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার কথা বলে। এতে শুধু কষ্টই কষ্ট। তার চেয়ে বরং গান শোনো এবং জীবনকে উপভোগ করো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা উক্ত আয়াত নাযিল করেন। (আসবাবুন নুযূল, ওয়াহিদি, পৃ. ১৭৯ এবং তাফসিরে কুরতুবি)
এছাড়াও একাধিক হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় উম্মতকে এবিষয়ে সতর্ক করে গেছেন। উম্মাহর বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য ও অনুসৃত সকল আলেমই বাদ্যযন্ত্র সম্বলিত গান-বাজনা হারাম হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
ব্রিটেনের একটি স্বাস্থ্যসংস্থা বেশ কয়েকজন মিউজিসিয়ানের ওপর গবেষণা জরিপ চালায়। সেই জরিপ থেকে তারা আবিষ্কার করে যে, বাদ্যযন্ত্র ব্যবহারকারী গায়করা সাধারণ মানুষের তুলনায় তিনগুণ বেশি সংখ্যায় মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
তাছাড়া আমেরিকার কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত ভিন্ন আরেক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যারা মিউজিক নিয়ে কাজ করে তাদের বেশিরভাগই নিজেদের জীবন নিয়ে বিষণ্ণতায় ভোগে। হতাশা ও দুশ্চিন্তা তাদের ঘিরে ফেলে। অবশেষে শারীরিক ও মানসিক রোগে তারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
আর পশ্চিমা দেশগুলোতে অধিকহারে মানুষের হৃদয়ে অশান্তি ও বিষণ্ণতা সৃষ্টির পেছনে এই বাদ্যযন্ত্র সম্বলিত গান-বাজনা হলো অন্যতম একটি কারণ। উল্লেখ্য যে, গবেষকগণ ২ হাজার ২ শত ১১ জন মিউজিসিয়ানের ওপর জরিপ চালিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করেন। দেখা গেছে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে কর্মরত প্রচুর মিউজিসিয়ানের জীবন এমন অনেক রোগে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। (দেখুন- দ্যা গার্ডিয়ান: ১৭ ডিসেম্বর, ২০১০ এবং কনসেকিউন্স ওফ সাউন্ড নেট: ০২ নভেম্বর, ২০১৬)
গবেষণায় জানা গেছে, যারা দীর্ঘক্ষণ কানে হেড ফোন লাগিয়ে গান শুনতে থাকে তাদের কানে ব্যাকটেরিয়া জমতে থাকে। এই ব্যাকটেরিয়া ধীরে ধীরে তার শ্রবণ শক্তিকে কময়ে দেয় এবং কানের ভিতরে একটি ব্লকেজ সৃষ্টি করে। কানের সাথে মস্তিস্কের যোগাযোগ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এমনকি ঐ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে কানের ত্বকে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।
