নিজস্ব প্রয়োজনেই সীমান্তে সেনা মোতায়েনের দাবি মিয়ানমারের
শ.ম.গফুর,উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি : দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠকে মিয়ানমার দাবি করেছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তে নিজেদের অংশে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বাড়তি সেনা মোতায়েন করেছে। বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের তুমব্রু সীমান্তে বৈঠকের পর বিজিবির কর্মকর্তা লেফটেন্যাস্ট কর্ণেল মঞ্জুরুল আহসান খান সাংবাদিকদের বলেছেন, মিয়ানমারের কর্মকর্তারা গুলির কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “তমব্রু সীমান্তে জিরো লাইনের কাছাকাছি ফায়ারিং কেন হয়েছে একথা আমরা জিজ্ঞেস করেছি, তারা বলেছেন তারা ফায়ার করেন নি।” গতকাল শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে ঢেঁকুবুনিয়ায় অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান।
মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশ জানিয়েছে, ভবিষ্যতে সীমান্ত এলাকায় ফাঁকা গুলির আগে বাংলাদেশকে অবহিত করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশ বিজিবির কাছে প্রশ্ন করে, সীমান্তে বাংলাদেশ কেন সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে। জবাবে আমরা জানাই, এটা মিয়ানমারকে টার্গেট করে করা হয়নি, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যই আমরা এটা করেছি।’
লেফটেন্যাস্ট কর্ণেল মঞ্জুরুল আহসান খান বলেন, মিয়ানমারের দিকে যারা আছে তারা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ইউনিফর্ম পরা, তাই আমরা বলতে পারছি না যে তারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর লোক।
৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে:কর্ণেল মনজুরুল হাসান বলেন, বৃহস্পতিবার তুমব্রু শুন্যরেখায় মিয়ানমারের সৈন্য সেনা বৃদ্ধি ও গুলি বর্ষণের ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। গুলিবর্ষণের ঘটনা অস্বীকার করে, এগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে জানিয়েছে মিয়ানমার। মিয়ানমারের ওপাড়ের সৈন্য সমাবেশ ও গুলিবর্ষণের কারণে স্থানীয় জনগণকে বিচলিত না হওয়ার কিংবা আতংকিত হওয়ার কোন কারণ নেই বলে জানিয়ে অভয় দেন ৩৪ বিজিবির এই কর্মকর্তা। তিনি আরও জানান যে, অচিরেই শুন্যরেখায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে জাতীয় পর্যায়ের বৈঠকে ঐকমত্য অনুযায়ি প্রত্যাবাসন কার্যকর হবে বলে পতাকা বৈঠকে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল আশ্বস্থ করেছেন। মিয়ানমারের যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবি প্রস্তুত এবং সর্তক রয়েছে বলেও জানান ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক মনজুরুল হাসান।
গতকালের চেয়ে আজ ( শুক্রবার) পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। পতাকা বৈঠকের আগে সকাল বারোটার দিকে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম সরওয়ার কামালসহ বিজিবির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শুন্যরেখার পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখেন। আজ ( শুক্রবার) সীমান্তের শুন্য রেখায় কোন প্রকার অস্বস্তিকর পরিবেশ দৃশ্যমান হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর তুমব্রু সীমান্তের কোণারপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমার বাহিনীর সদস্যদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা রোহিঙ্গাদের বাঁধায় ভেস্তে যায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার সময় মিয়ানমার বাহিনী ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেছে। মিয়ানমার-বাংলাদেশের তুমব্রু সীমান্তের ৩৪ ও ৩৫ নম্বর সীমান্ত পিলারে আকস্মিকভাবে বিপুলসংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর মিয়ানমারের একদল সেনা ও সীমান্তরক্ষী সদস্য সশস্ত্র অবস্থায় মই দিয়ে কাঁটাতার ডিঙ্গিয়ে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। এ সময় ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা দা-খন্তা ও লাঠি নিয়ে নারায়ে তাকবীর-আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে ধাওয়া দেয় মিয়ানমার বাহিনীকে। ধাওয়ার মুখে মিয়ানমার বাহিনী দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে পেছনে সরে গিয়ে বাংকারে আশ্রয় নেয়।
তবে মিয়ানমার সরকারের একজন মুখপাত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি জানায়, সীমান্ত এলাকায় সন্দেহভাজন রোহিঙ্গা জঙ্গীদের চলাচলের তথ্য পাওয়ার কারণেই সীমান্তে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে যাওয়া একজন সাংবাদিক বিবিসিকে জানিয়েছেন, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী সীমান্তের ওপার থেকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে শরণার্থীদের সেখান থেকে সরে যেতে বলছে।
গত আগস্ট মাসে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হবার পর থেকে সাত লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে। সম্পাদনা: ইকবাল খান