হামলাকারীরা ‘সাঈদী’ ‘শফী’র ওয়াজ শুনে প্ররোচিত হয়
শাহরিয়ার কবির
মুহম্মদ জাফর ইকবাল সহ লেখক বুদ্ধিজীবীদের উপর সার্বক্ষনিকই হামলা হচ্ছে। শামসুর রাহমানের উপর হামলা হয়েছে, হুমায়ুন আজাদের উপর হামলা হয়েছে। এ হামলা বিভিন্ন সময় হচ্ছে, এটা নতুন কোন বিষয় না। মুক্তচিন্তা বা ভিন্ন মতের লেখক যারা আছেন কিংবা ভিন্ন মতে যারা বিশ্বাসী, তাদের উপর তো মৌলবাদি সন্ত্রাসীরা এ হামলা ধারাবাহিকভাবে করে যাচ্ছে। জাফর ইকবালের নাম তাদের হত্যার তালিকায় অনেক আগে থেকেই ছিল। ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের প্রধান আহমদ শফি যে খোলা চিঠি লিখেছিলেন, সেখানে তো জাফর ইকবাল সহ আমাদের সবাইকে নাস্তিক মুরতাদ কাফের ঘোষনা করেছেন। এই ঘোষণার অর্থ কি ? এর অর্থ হল, এদের কে হত্যার ফতোয়া দিচ্ছেন তিনি। আমাদের কে হত্যা করবার জন্য দলের কর্মী বা নেতাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন তিনি।
একজনকে মুরতাদ বলার অর্থটা কি ? জামায়াতে ইসলামীর প্রধান মওলানা আবুল আলা মওদুদীর লেখা “মুরতাদের শাস্তি” নামে একটি বই আছে। এই মওদুদীবাদ বাংলাদেশে থাকবে, আর লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যক নিরাপদে থাকবে, এটা হতে পারে না। জাফর ইকবালকে এর আগেও হামলার চেষ্টা হয়েছে। জাফর ইকবালকে পুলিশ পাহারায় নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশ পাহারা দিয়ে তো এধরনের চোরাগোপ্তা হামলা বন্ধ করা যাবে না। সন্ত্রাসের একটি রাজনীতি আছে, এই সন্ত্রাসের একটি দর্শন আছে। এই সন্ত্রাসের দর্শন যদি নির্মূল করা না যায়, এই সন্ত্রাসের রাজনীতি যদি নিষিদ্ধ করা না যায়, মওদুদীবাদের রাজনীতি আমরা যেটাকে বলি, যে রাজনীতি এই সন্ত্রাসের ক্ষেত্র তৈরি করে। সন্ত্রাসের জন্য, হত্যার জন্য মানুষকে প্ররোচিত করে। যে ছেলেটা হামলা করেছে, তার সাথে কি জাফর ইকবালের ব্যক্তিগত শক্রতা ছিল? সে নিশ্চয়ই দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর কোন ওয়াজে শুনেছে যে, জাফর ইকবাল একজন মুরতাদ। কিংবা আহমদ শফী’র খোলাচিঠি পড়েছে, ব্লগে মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা ধারাবাহিকভাবে জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। সেুগলো পড়ে সে প্ররোচিত হয়েছে এবং সে ভেবেছে, এটা তার ঈমানি দায়িত্ব। সরকার কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, বাংলাদেশে ধর্মের নামে সন্ত্রাসের রাজনীতি থাকবে কি-না? জামায়াতিরা সব জায়গাতেই ঢুকছে।
আওয়ামীলীগে ঢুকছে, শ্রমিক লীগে ঢুকছে, সবজায়গাতেই ঢুকছে। রাজনীতি টা হচ্ছে গুরুত্বপুর্ণ। সে শ্রমিক লীগ করে নাকি শ্রমিক দল করে নাকি শ্রমীক শিবির করে সেটা গুরুত্বপুর্ণ নয়। কোন রাজনীতি এসব হত্যা হামলার ক্ষেত্র তৈরি করছে? এসব দল একটি দুটো নয়, এমন শত শত দল রয়েছে। যে হামলা করেছে, তার মামা শ্রমীক লীগের নেতা। তাই বলে সরকার এই হামলা করেছে, এটা তো বলা যাবে না। এটা সরকারের কোনো বিষয় নয়। সরকারের দর্শন তো মওদুদিবাদ নয়। হামলাকারী করে জামায়াতের রাজনীতি, আবার জামায়াত কে শেল্টার দিচ্ছে বিএনপি। জামায়াতের লোকজন কৌশলগত কারণে সরকারের বিভিন্ন অংগ সংগঠনে ঢুকছে। জামায়াতের লোকেরা ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামীলীগে ঢুকছে। জামায়াতের লোক ঢুকে সন্ত্রাস করলে তাই বলে তো আওয়ামীলীগ কে দায়ী করা যাবে না। আওয়ামীলীগ কে দায়ী করতে হবে কেন আওযামীলীগ এদের কে জায়গা দিচ্ছে?
আমি মনে করি না, পুলিশ শাহরিয়ার কবিরের ওপর হামলার তদন্তে কোন প্রকার গড়িমসি করবে। কারণ, প্রথমত সে তো শ্রমীক লীগের কোন নেতা নয়। দ্বিতীয়ত, এই ছেলের যে ব্যাকগ্রাউন্ড, তার মামা শ্রমীক লীগের নেতা। এটা তদন্তে প্রমাণ হতে হবে যে, তার মামা তাকে হামলার নির্দেশ দিয়েছে। যে হামলা করেছে তার পরিবারের সবাইকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে, কিন্তু তদন্তে তো আসতে হবে যে, এরা তাকে হামলার নির্দেশক। তদন্তে কোনরকম গাফলতি করা চলবে না। এই ছেলে হচ্ছে সামান্য মাঠ পর্যায়ের একজন কর্মী। এর নেপথ্যে নায়ক কে, সেটা বের করতে হবে। হেফাজতের খোলাচিঠিই তো সবচে ভালো প্রমাণ। আহমাদ শফীকে কি করা হয়েছে? যে বলেছিল জাফর ইকবাল নাস্তিক মুরতাদ। মুরতাদ বলার অর্থই তো হচ্ছে তাকে হত্যা কর।
জাফর ইকবাল কে হত্যা চেষ্টার একটি নিবিড় তদন্ত হতে হবে। গোয়েন্দা বাহিনীর সর্বোচ্চ চৌকস দলকে এর তদন্তভার নিতে হবে। এর পেছনে কারা আছে তা খুঁজে বের করতে হবে। এই ছেলে এই কাজ করেছে, তাই তাকে বিচার করে দশ বছর কারাদ- দেওয়া হল। এই ধরনের বিচার আমরা চাই না। আমরা চাই, এর পেছনে কারা আছে, হুকুমে কারা আছে, কোন রাজনীতি, কোন দর্শন এই হামলার ক্ষেত্র তৈরি করেছে? এই ধরনের উম্মাদনার যে রাজনীতি, আমাদেরকে সেখানে পৌঁছাতে হবে। সে রাজনীতি আমাদের বুঝতে হবে, সে হামলার যে দর্শন সেটা আমাদের বুঝতে হবে। সে রাজনীতি বা সে দর্শন না বুঝলে এই হামলা বন্ধ করা কখনই সম্ভব নয়।
পরিচিতি : সভাপতি, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি/মতামত গ্রহণ : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ /সম্পাদনা : মাহবুবুল ইসলাম