সন্ত্রাস দমনে ইসলাম
মুহাম্মাদ আবু আখতার
ইসলাম মানবতার ধর্ম। ইসলামের সকল বিধান মানবতার রক্ষাকবচ। বর্তমান যুগে মানবতার বিরুদ্ধে বড় হুমকি হচ্ছে সন্ত্রাস। আজ মানুষ সন্ত্রাসের ভয়ে জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। সন্ত্রাস দমনে ইসলামের ভুমিকা অপরিসীম। যারা মানুষ হত্যা করে ধন-সম্পদ ছিনতাই করে পৃথিবীতে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য কঠিন শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।” (সুরা মায়িদা: ৩৩)
উপরোল্লিখিত আয়াতে সন্ত্রাসীদের অবস্থাভেদে চার ধরণের শাস্তির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। যারা শুধু মানুষ হত্যা করেছে, সম্পদ লুট করে নি তাদেরকে স্বাভাবিকভাবে হত্যা করা হবে। যারা হত্যা ও সম্পদ লুট উভয়টা করেছে তাদেরকে শুলিবদ্ধ করে হত্যা করা হবে। আর যারা শুধু সম্পদ লুট করেছে তাদের হাত পা বিপরীত দিক হতে কাটা হবে। যারা মানুষ হত্যা ও লুটপাট কিছু করতে পারে নি কিন্তু এজন্য চেষ্টা করেছিল তাদেরকে দেশ হতে বহিষ্কার করা হবে। রাসুলুল্লাহ (সা) কোমল মনের মানুষ হলেও সন্ত্রাস দমনে ছিলেন অত্যন্ত কঠোর। তিনি আল্লাহ তায়ালার হুকুম অনুযায়ী সন্ত্রাসীদের কঠিন শাস্তি প্রদান করেন। হজরত আনাস (রা.) বলেন, উরাইনা গোত্রের কিছু লোক (ইসলাম গ্রহণের উদ্দেশ্যে) মদীনায় এলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ল। নবী (সা) তাদের (সদকার) উটের নিকট যাওয়ার এবং উটের পেশাব ও দুধ পান করার নির্দেশ দিলেন। তারা সেখানে চলে গেল। অতঃপর তারা সুস্থ হয়ে নবী (সা) এর রাখালকে হত্যা করল এবং উটগুলো তাড়িয়ে নিয়ে গেল। এ সংবাদ দিনের প্রথম ভাগেই (তাঁর নিকট) এসে পৌঁছল। তিনি তাদের পশ্চাদ্ধাবন করার জন্য লোক পাঠালেন। বেলা বাড়লে তাদেরকে পাকড়াও করে আনা হল। অতঃপর তার আদেশে তাদের হাত পা কেটে ফেলা হল। উত্তপ্ত শলাকা দিয়ে তাদের চোখ ফুটিয়ে দেয়া হল এবং গরম পাথুরে ভূমিতে তাদের নিক্ষেপ করা হল। তারা পানি চাইছিল, কিন্তু তাদেরকে পানি দেয়া হয়নি। হাদীসের অন্যতম রাবী হজরত আবূ কিলাবাহ (রহঃ) বলেন, এরা চুরি করেছিল, হত্যাকা- ঘটিয়েছিল, ঈমান আনার পর কুফরী করেছিল এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল।
(সহিহ বুখারী: ২৩৩) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তায়ালা কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বলেন, “আল্লাহ তায়ালা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন তাকে অন্যায়ভাবে হত্যা কর না।” (সুরা বনি ইসরাইল: ৩৩) একজন মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা পৃথিবীর সব মানুষকে হত্যা করার সমতুল্য পাপ। পক্ষান্তরে একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা পৃথিবীর সব মানুষের জীবন রক্ষা করার সমতুল্য নেকী। এ ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করার সমতুল্য অপরাধ করে এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষার মত নেক আমল করে।’ (সুরা মায়িদা: ৩২) কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা দ-নীয় অপরাধ। এর শাস্তি স্বরুপ ইসলামে কিসাসের বিধান রয়েছে। কিসাস হলো অপরাধের অনুরূপ শাস্তি। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা ফরজ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সুরা বাকারা: ১৭৮)
অন্য আয়াতে আরো পরিস্কার ভাষায় বলা হয়েছে, “আমি এ গ্রন্থে তাদের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং জখম সমূহের বিনিময়ে সমান জখম।’ (সুরা মায়িদা: ৪৫) ইসলামের এসব বিধান সমাজ ও রাষ্ট্রে পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়িত হলে কেউ সন্ত্রাস করার সাহস পেত না। একমাত্র এসব বিধান বাস্তবায়নের মাধ্যমে সন্ত্রাস নির্মূল করা সম্ভব। এছাড়া সন্ত্রাস নির্মূল করার বিকল্প কোন উপায় নেই। তাই সন্ত্রাস নির্মুলে ইসলামের এসব বিধান বাস্তবায়ন করা সময়ের দাবি।