‘স্বাধীনতা’ আল্লাহর নেয়ামত
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির
ইসলামে স্বাধীনতার গুরুত্ব অপরিসীম। দেশ প্রেম মহৎ গুণ, “হুব্বুল ওয়াতানি মিনাল ঈমান” স্বদেশ প্রেম ঈমানের অংশ। ফলে একজন সদা জাগ্রত দেশপ্রেমিক দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটির জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত থাকে। প্রকৃত দেশপ্রেমিক দেশ ও জাতির জন্য এভাবে প্রাণ উৎসর্গ করাকে অবশ্য কর্তব্য বলে মনে করে এবং স্বদেশ প্রীতির প্রেরণায় উদ্বেলিত হয়ে আত্মহুতি দেয়। মানবতার মুক্তিদূত, নির্যাতিত, নিপীড়িত, নিগৃহীত মানুষের দরদী নবী (সা.) এর দিকে নজর দিলে এর বাস্তবতা পূর্ণমাত্রা ফুটে ওঠে। মক্কার মুশরিকরা যখন দল বেঁধে মদিনাতুল মুনাওয়ারার ওপর আক্রমণের জন্য এসেছিল তখন রাসুল (সা.) সাহাবিদের সঙ্গে নিয়ে মদিনার স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ক্ষুধা ক্লিষ্টে ক্লান্ত হাবীবে খোদা (সা.) পেটে পাথর বেঁধে হাতে পরিখা খনন করে ছিলেন। সাহাবীদের জান-প্রাণ উৎসর্গ করে দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তাগিদ প্রদান করেছিলেন। দেশের স্বাধীনতা রক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে রাসুল (সা.) বলেছেন, যে চোখ দেশের সীমান্ত রক্ষায় বিনিদ্র থাকে সে চোখকে জাহান্নাম স্পর্শ করে না। তিনি আরো বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় একদিন সীমান্ত পাহারা দেয়া এক হাজার দিন বাড়ীতে বসে এবাদত করার চেয়ে উত্তম। (মিশকাত শরীফ)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, যে স্বাধীনতা রক্ষার জন্য একদিন সীমান্ত পাহারা দেয় সে মৃত্যুর পর তার কল্যাণকর কাজের প্রতিদান সর্বদা পেতে থাকে আর সম্মানজনক রিজিক প্রাপ্ত হয় এবং কবরের আজাব থেকে মুক্তি পায় (মিশকত শরীফ)।
মা, মাটি ও মাতৃভাষা স্বর্গতুল্য। মানুষের বড় গর্বের ধন। স্বদেশ প্রেম মানব প্রেমেরই নামান্তর। স্বদেশ প্রীতি সব মহত্বের উৎস, মনুষ্যত্বের প্রসূতি, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ মানুষ ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। কারণ সে নিজ স্বার্থ ত্যাগ করে দেশ ও জাতির জন্য জীবন উৎসর্গ করে। স্বাধীনতা আল্লাহর মহান নিয়ামত। স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার মাঝেই পরম তৃপ্তি। তাই কবি বড় সুন্দর করে বলেছেন “পরাধীন স্বর্গবাস হতে গরিয়সী-স্বাধীন নরকবাস, অভয় নির্ভীক স্বাধীন ভিক্ষুক ওই তরুতলে বসি অধীন ভূপতি হতে সুখী সমধিক।” দীর্ঘ নয় মাস মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জীবন বাজি রেখে আত্মোৎসর্গ করে যারা স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে এনেছেন, উপহার দিয়েছেন স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, লাল সবুজের পতাকা, তাদের কাছে আমরা বড়ই ঋাণী। সে ঋান শোধ করার নয়। দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হয়, যে কাজে তাদের আত্মা কষ্ট পায় এমন কাজ থেকে বিরত থাকা সকলের উচিত। তাদের আত্মার শান্তি কামনা করা, রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। শেষ কথা; স্বাধীনতা যে কত বড় নিয়ামত পরাধীন না হলে হয়তো বোঝা যায় না। দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হলে বিপন্ন হয় মানবতা। তাই স্বাধীনতাকে সালাম জানাই। সালাম জানাই ভাষা শহীদদের প্রতি। দেশকে ভালবাসার জন্য প্রতিটি মানুষকে করি আবেদন। প্রতিদিন যেন আমরা দেশ ও জাতিকে নিয়ে ভাবি-এবং ভালবাসি দেশের মাটি ও মানুষদের।