মানবতার পাশে ইসলাম
মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ
চারদিক হাহাকার। চিৎকার আর ক্ষোভ দৃশ্যমান। রক্তাক্ত দেহগুলো পড়ে আছে রাস্তার চারপাশে। ছোট্ট শিশুটির কান্নার আওয়াজে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আসছে। রক্তে রঞ্জিত বোনটি আধো পায়ে সামনে এগোচ্ছে, কিন্তু পরক্ষণে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলো। বাচ্চাগুলো ভয়ে আর আতঙ্কে মাকে ঝাপটে ধরছে প্রতিনিয়ত। অদূরে কাতরাচ্ছে কয়েকটি শিশু। বাবা কাছে গিয়ে দেখেন, তার আদুরের প্রিয় সন্তান আর নেই। তখন চিৎকারের মাত্র দ্বিগুণ হয়। মা কাঁদতে ভুলে যান ঠিক এই সময়টায়। এদিকে ভাই বোনকে, বোন ভাইকে হারিয়ে নির্বাক। ড্রেনগুলোতে এখন পানির বদলে রক্তের ¯্রােত বয়ে যাচ্ছে। তাজা রক্তে রাস্তার অলিগলি ভেসে গেছে সেই কবে। তাদের নেই কোনো বাসস্থান, মাথা গুঁজবার ঠাইটুকুনও তারা কেড়ে নিয়েছে। অবলা নারীরা রাস্তাঘাট কিংবা ধ্বংসস্তূপের কোনো এক কোণে লুকিয়ে থাকেন খুব কষ্ট করে। উপরের চিত্রায়িত শহরের নাম সিরিয়ার পূর্ব ঘৌতা। ঘৌতা শহরের প্রতিটি মহল্লা, প্রতিটি গলি আর বাড়ির চিত্র এখন এমনই। খুব কম বাড়িই এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। শিশু, বৃদ্ধ, নারীদের কেউ হাত-পা হারিয়েছে, কেউ সারা গায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে অস্থায়ী হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। আর যারা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে মৃত্যু ও বোমার স্পিন্টার থেকে তারা ধ্বংসস্তূপে খুঁজছে স্বজনের লাশ, কেউ বা লাশ নিয়ে যাচ্ছে কবরস্থানে। ১০৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পূর্ব ঘৌতা এলাকাটিতে প্রায় চার লাখ লোকের বাস। বাসিন্দাদের অর্ধেকের বেশির বয়স ১৮ বছরের নিচে, অর্থাৎ শিশু-কিশোর। রাজধানী দামেস্ক থেকে ১০ কিলেমিটারের মধ্যের এই এলাকাটি সিরিয়ার বিদ্রোহীদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ২০১৩ সাল থেকে এলাকাটি অবরোধ করে রেখেছে বাশার আল আসাদের সরকারি বাহিনী। এবার এলাকাটির দখল নেয়ার জন্য সিরীয় সেনাবাহিনী একযোগে হামলা শুরু করেছে। তাদের সরাসরি সহযোগিতা করছে রাশিয়া ও ইরান। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নামে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে নিরপরাধ বেসামরিক লোকদের। কোনো দেশের সরকার নিজ দেশের জনগণকে মারার জন্য ভিনদেশী বাহিনী ডেকে আনে এমন নজির বিশ্বে সম্ভবত এই প্রথম। রাশিয়া তাদের নতুন নতুন সব মারণাস্ত্রের কার্যকারিতা প্রয়োগের জন্য বেছে নিয়েছে সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রকে। গত কয়েকদিনে ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস হয়েছে রাশিয়ার বিমান হামলায়। মারা গেছে অন্তত ১০ জন ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্মী। নিহত হয়েছে শিশুসহ ৫৬০ জন।