নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় নবী মুহাম্মদ সা. এর নীতি
মো: আবু তালহা তারীফ
নারী জন্ম নিলেই হত্যা, তাদের ওপর অত্যাচার, নারী জাতির এহেন ক্রান্তিকালে তাদেরকে শোষণ, অবহেলা ও নির্যাতনের হাত থেকে উদ্ধার করে সম্মান ও গৌরবময় জীবন যাপনের অধিকার নিশ্চিত করতে আবিভূত হলেন বিশ্ব কল্যানের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। নারীকে মানবীয় মর্যাদায় সমাসীন করেছে এবং তার মানবিক অধিকার নিশ্চিত করেছে ইসলাম। মানব জাতীর যে সম্মান ও মর্যাদার ঘোষনা ইসলামে দেওয়া হয়েছে সে সম্মান ও মর্যাদা লাভের ব্যাপারে নবী পুরুষে কোন ভেদাভেদ করা হয়নি। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-,“আমি তা আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি, তাদেরকে উত্তম রিযিক দান করেছি এবং আমি যাদের সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি”। (সূরা বনী ইসলাইল- ৭০)
বিশ্বাসের স্বাধীনতা নারীর ব্যক্তিত্বকে সমুজ্জল করেছে। ফিরাউনের স্ত্রী আছিয়া যিনি বিশ্বাসী ছিলেন। হজরত মরিয়ম বিশ্বাসী ছিলেন আল্লাহর নিকট প্রিয় নবী (সাঃ) এর যুগে রামলা বিনাত আবু সুফিয়ান পিতার ন্যায় আবিশ্বাসী ছিলেন না। হজরত খাদিজা নারী হিসেবে প্রথম ইসলাম গ্রহণ কারীর গৌরব গ্রহণ করেন। নারীর অনুমতি বিয়ের মধ্যে প্রথম নেওয়া হয় এমনকি নারীর অনুমতি ব্যতিরেকে বিয়ে বৈধতা পায় না। নারীর রয়েছে উপার্জন করার অধিকার এবং নিজ পছন্দমত ব্যয় করার স্বাধীনতা। রাসুল (সা.) এর স্ত্রী যয়নব বিনতে যাহাশ (রা.) কুটির শিল্পে পারদর্শী ছিলেন এবং এর উপার্জন তিনি আল্লাহর পথে দান করতেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য এবং নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য”। ( সূরা: নিসা-৩২)
নারী পুরুষ এর যৌথ প্রয়াস একটি সমাজ রচনা করবে এটাই কাম্য। সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নারীর অংশগ্রহন নারীর মানবীয় প্রকৃতি, মর্যাদা, নিরাপত্তা ও অধিকার সংরক্ষন করে পক্ষান্তরে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা, যৌন উচ্ছৃঙ্খলতা ও বন্ধনহীন সম্পর্ক নারীকে দুর্বল করে তোলে। তাই অশ্লীল ও নিকৃষ্ট কাজ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা ফরমান “ অবৈধ যৌন সংযোগের নিকটবর্তী হয়োও না, তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আরচন” (সূরা বনী ইসরাইল- ৩২)
নারীর প্রতি সংহিসতা এর মূলে রয়েছে নারীর প্রতি বৈষম্য। সহিংসতার প্রকৃতি হতে পারে শারীরিক, মানবিক ও যৌন। এসকল ঘটনা ঘটতে পারে ঘরে অথবা বাইরে। বিশ্বে স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ অনুযায়ী দেশে দেশে ১৫-৭১% নারী ঘরে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। পারিবারিক নির্যাতন ছাড়াও আমাদের দেশে ক্রমবর্ধমান হারে রয়েছে ইভটিজিং, নারী পাচার, এসিড নিক্ষেপ, অপহরন, যৌতুক, ধর্ষন, হত্যার মতো অপরাধ। জন্মের দিন থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত নারী ঝুকির বাইরে নয়। নারীর প্রতি সংহিসতা রোধে নারী পুরুষের নৈতিক শিক্ষা, ধর্মের প্রকৃত জ্ঞান, অনুশীলন প্রয়োজন। নারী পুরুষের সম্পর্ক সম্পর্কে আল্লাহ তায়াল বলেন “মুমিন নর নারী একে অপরের বন্ধু, এরা সৎ কাজের নির্দেশ দেয়, অসৎ কাজে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও রসুলের আনুগত্য করে”। (সূরা-তাওবা-৭১) নারী মুক্তি এর নামে ঘোমটা খুলে শালীনতা ত্যাগ করবার নাম নয়। মহান আল্লাহ তায়ালা নারীর প্রয়োজনেই নারীকে শালীন পোশাকের বিধান দিয়েছেন, মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন “হে নবী তুমি তোমার স্ত্রী গনকে , কন্যাগনকে ও মুমিন নারীগনকে বল। তার যেন তাদের চাদরের ফিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়, এতে তাদের চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না, আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু”। (সূরা আহযার: ৫৯)
বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানে নারীর সামাজিক অবস্থান ও অধিকার সুনিশ্চিত ভাবে রক্ষিত। ইসলামে কন্যা জায়া জননীর অধিকার রক্ষায় বলিষ্ট নীতি নারীর অবস্থান কে সুদৃঢ় করেছে। তাছারা নারী একজন শ্রদ্ধেয়া মা। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত রয়েছে বলে মহানবী (সা.) বলেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন “আমি মানুষ কে পিতা মাতার প্রতি সদয় ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি। (সূরা-আহকাফ-১৫)