পথশিশুদের জন্য দীনশিক্ষা
ফজলে রাববি
ঘরবাড়ি আবাসহীন যে সমস্ত শিশু রাস্তাঘাট, ফুটপাতে অযতেœ অবহেলায় বেড়ে ওঠে, সেখানেই তারা রাতযাপন করে তাদের ‘স্ট্রিট চাইল্ড’ বা ‘পথশিশু’ বলে। জাতিসংঘের দেয়া প্রদত্ত সংজ্ঞাও অনেকটা এমন। দেশী-বিদেশী নানা সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী দেশে পথশিশুদের সংখ্যা প্রায় দশলাখের ওপর। যারা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মতন নূন্যতম মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। দু’হাজার পাঁচ সালে ইউনিসেফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে মোট পথশিশুর সংখ্যা ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৮ জন ছিল। একই প্রতিবেদনে ২০১৪ সাল নাগাদ সম্ভাব্য পথশিশুর সংখ্যা দেখানো হয়েছে ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৫৪ জন। ২০২৪ সাল নাগাদ এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ১৬ লাখ ১৫ হাজার ৩৩০ জনে।
পারিবারিক দ্বন্দ্ব, পিতামাতার পারস্পরিক সম্পর্কের টানাপোড়েন, পিতৃ বা মাতৃ¯েœহহীন বেড়ে ওঠা, এতিম, আর্থিক দৈন্য, জন্মপরিচয়হীনতা ইত্যাদি নানা কারণ এসব পথশিশুদের সবিশেষ এ পথ গ্রহণে বাধ্য করে। দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ পথশিশুদের অবস্থান ঢাকায়। পথশিশুরা স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকা, নোংরা পচা বাসি খাবার গ্রহণ, রোদ বৃষ্টিতে ভেজার ফলে নানা অসুখ বিসুখ, পুষ্টিহীনতা, অনাহার ও অর্ধাহার তাদের নিত্যসঙ্গী।এসকল পথশিশু একসময় জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়ে শিশুশ্রমের পথও বেছে নেয়। শিশুশ্রমের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ পথশিশুদের আধিক্য। এদের অনেকেই সঙ্গদোষে পড়ে নেশায় জড়িয়ে যায় কোনো কোনো সময়। নিয়ন্ত্রণহীনতার ফলে ছোটোখাটো চুরি, ডাকাতি এমনকি মাদকদ্রব্য চোরাচালানেও তারা জড়িয়ে পড়ে। দেশে দেশী-বিদেশী অনেক সংগঠন পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে। এসব সরকারী বেসরকারী সংগঠন তাদের পূনর্বাসন ও শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে। বিষয়টি আশাব্যঞ্জক। শিক্ষার যথাযথ আলো পেলে এই সুবিধাবঞ্চিতরা সমাজবিরোধী কর্মে না জড়িয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হবে এমন আশা করা যায়। কিন্তু শিক্ষার অপ্রতুল ব্যবস্থা, সুবিধাবঞ্চিতদের প্রতি ঋণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি এদের সুবিধা অর্জনে বড় বাধা। প্রকৃতই সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশু সুশিক্ষা পেলে মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।
নীতি নৈতিকতার যথার্থ পাঠদান নিশ্চিত করতে পারাটাই হতে পারে তাদের জন্য যথার্থ পদক্ষেপ। মূলকথা হলো, পথশিশুদের দ্বীনী শিক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা। মুসলিম হিসেবে দ্বীনী শিক্ষা অর্জন সবার ওপরই ফরজ। যেমনটা রাসূলের বাণী, ‘প্রত্যেক মুসলিমের জন্য দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করা ফরজ’। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং:২২৪)
শৈশবেই যদি এসব শিশুকে দ্বীনী শিক্ষার ন্যায় নীতি নৈতিকতার শিক্ষা দেয়া যায়, শরয়ী বিধান অর্জনের পাশাপাশি আগামীতে এরাই হয়ে উঠবে দেশের সৎ, শৃঙ্খল ও সুযোগ্য নাগরিক। কথায় আছে, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাও যাতে আগামী দিনের সুন্দর পৃথিবী গড়ায় শামিল হতে পারে, সেজন্য প্রয়োজন শৈশবেই যথার্থ শিক্ষা।
লেখক: শিক্ষার্থী, মাদ্রাসাতুল ইহসান আল আরাবিয়া, উত্তরা, ঢাকা।