জীবনপথে নবীজীকে অনুসরণ!
হাবীবুল্লাহ সিরাজ
ইসলাম মানবতার তরে পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত রয়েছে তার সুন্দর থেকে সুন্দরতম বিধানাবলি। জীবনের কোনো অংশ বাদ পড়েনি তার সুন্দর বিধান থেকে। আর হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সেই বিধানগুলোর জীবনদানকারী। তাঁর জীবনের প্রতিটি পর্ব ছিল ঐশী বিধানের সুন্দরতম বিন্যাস। এরই ধারাবাহিকতায় পড়েনি খাওয়া, ঘুম, গোসল, ইস্তেঞ্জা, বসা ও চলাফেরাসহ ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র কোনো কাজ। যেমন বসার ক্ষেত্রে হাদিস বর্ণিত হয়েছেÑ ‘বিলম্বে এসে মানুষদের ঠেলে মজলিসের মধ্যে বসা নিষেধ।’ রোদ্র ছায়ায় মিলে বসা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ও নিষেধ। মজলিস চলাকালে ঘোরাফেরা, নড়াচড়া, দুজনের মাঝখানে বসা, কথা বলা নিষেধ। এসব হাদিসের ওপর আমল করা মুমিনের একান্ত কর্তব্য।
শোয়ার ক্ষেত্রে রাসূল (সা.) এর কিছু বিধানের প্রতি আমাদের লক্ষ করা উচিত। হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিতÑ তিনি বলেন, রাসূল (সা.) চিত হয়ে শুয়ে এক পা খাড়া করে অপর পা তার ওপর রাখতে নিষেধ করেছেন। জাবির থেকে অন্য এক হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ কখনো এমনভাবে চিত হয়ে শয়ন করবে না যে, এক পা খাড়া করে অপর পা তার ওপর থাকে।’ সুতরাং হাদিসগুলো থেকে বোঝা গেল, চিত হয়ে শয়ন করে এক পা খাড়া করে অপর পা তার ওপর রাখা নিষেধ। উভয় হাদিস মুসলিম শরিফের বর্ণনায় এসেছে। তাই আমাদের উচিত উপরিউক্ত পন্থা পরিহার করা।
শোয়ার ক্ষেত্রে আরো একটি নিষিদ্ধ পদ্ধতি হলো মুখ, বুক ও পেট উপুড় করে শোয়া। হজরত ইয়াঈশ ইবনে তিখতাহ ইবনে কায়েস আল গিফারি র. তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন, ‘তিনি (তিখফাহ ইবনে কায়েস আল গিফারি) আসহাবে সুফফার অন্যতম সাহাবি ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি একদিন বুক ব্যথার কারণে উপুড় হয়ে শুয়ে ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি তার পা দিয়ে নাড়া দিয়ে আমাকে বলল, এ রূপ শয়নে আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হন। তখন আমি তাকিয়ে দেখি তিনি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আবু দাউদ ইবনে মাজাহ)
চলাফেলার ক্ষেত্রেও রয়েছে সুন্দরতম বিধানাবলি। আমরা প্রায় প্রতিদিন সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করি। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা না করলেও সমতল ভূমি দিয়ে চলি। এসবের প্রতিক্ষেত্রে রয়েছে সুস্পষ্ট হাদিস। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে উপরে ওঠার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ পাঠ করা। চাই চলন্ত সিঁড়ি হোক, লিফট হোক বা সাধারণ সিঁড়ি হোক। এরূপ নিচে অবতরণের সময় ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা। আর সমতল ভূমিতে চলা অবস্থায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা। এসব দোয়া পাঠে নিজেদের ভেতর বিনয়ভাব আসে। আর না পাঠে আসে অহঙ্কারভাব। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে ঘোষণা করেনÑ তোমরা জমিনে দম্ভভরে চলাফেরা করো না। এরপর বলেন, চলাফেরায় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করো। (সূরা লোকমান আয়াত ১৮.১৯) উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে। আল্লাহ ভূমিতে সব বস্তু হতে নত ও পতিত করে সৃষ্টি করেছেন। আর তোমাদের সৃষ্টিও এ মাটি দিয়েই। তোমরা এর ওপর দিয়ে চলাফেলা করোÑ নিজের নিগূঢ় তত্ত্ব বুঝতে চেষ্টা করো। আত্মাভিমানীদের ধারা অনুসরণ করে অহঙ্কার ভরে বিচরণ করো না। এরপর আল্লাহ বলছেন, ‘আল্লাহ কোনো অহঙ্কার আত্মাভিমানীকে পছন্দ করেন না।