মুক্তি, স্বাধীনতার পক্ষে ইসলাম
মুফতি আবদুল্লাহ তামিম
স্বাধীনতা সুন্দর-শোভাময়। আল্লাহ্ তায়ালা এ স্বাধীনতা দিয়েই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে ইসলাম যে সকল হক দান করেছেন স্বাধীনতা তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দান। সমাজ কিংবা পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জন্য যেমন নির্মল বাতাস দেহের জন্য আত্মা প্রয়োজন ঠিক তেমনই স্বাধীনতা প্রতিটি মানুষের জন্য প্রয়োজন।
ইসলাম সর্বপ্রথম গুরুত্ব দিয়েছে ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি। সুস্পষ্ট নীতিমালাও দিয়েছে ইসলাম। ঘোষণা করেছে ইসলাম গ্রহণে কাউকে বাধ্য করা যাবে না। ইসলাম গ্রহণে দাওয়াত দেয়া ও তার সৌন্দর্য ও মাহাত্ম উপস্থাপন করাই ইসলাম সমর্থন করে। জোর জবরদস্তিতে ইসলাম সমর্থন করে না। আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, দীন সম্পর্কে কোন জোর-জবরদস্তি নেই, সত্য ভ্রান্তি হতে সুস্পষ্ট হয়েছে। (সূরা বাকারা-২৫৬) অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আপনি আপনার প্রতিপালকের পথে আহ্বান করুন প্রজ্ঞা ও শোভনীয় উপদেশের মাধ্যমে, এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন উত্তম উপায়ে। (সূরা নাহল-১২৫)
ইসলাম ধর্মীয় স্বাধীনতার পাশাপাশি মুসলিম ও অমুসলিমের আচরণ নীতিমালাও বর্ণনা করে দিয়েছে, ঘোষণা করেছে অপরাপর ধর্মের অনুসারীদের ধর্মচর্চা তাদের মৌলিক অধিকারও। তাই আল্লাহ তায়ালা মানুষের স্বাধীনতার মূল্যায়ন করেছেন। আমাদের দেশ দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ভিতর দিয়ে স্বধীনতা অর্জন করেছে। রক্ত¯্রােত পাড়ি দিয়েছে বাঙালী। তাইতো স্বাধীনতা আমাদের স্বপ্ন চাওয়া ফুল। স্বপ্ন চাওয়া বাগান। এ স্বাধীনতা মহান আল্লাহরই দান। আল্লাহ তায়ালাই এ স্বাধীনতার আমূল্য সম্পদ আমাদের কে দিয়েছেন। এর শুকরিয়া আদায় করতে হলে আমাদের কে স্বাধীন দেশে আল্লাহর সকল বিধি-বিধান পালনের মাধ্যমে শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে হবে। কাউকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারো প্রতি অন্যায় অবিচার করা যাবে না। আল্লাহ পাক কুরআনে বলেন, তারা যদি তোমার নিকট আগমন করে, তবে তুমি তাদের মাঝে বিচার-ফয়সালা করো, কিংবা তাদের হতে মুখ ফিরিয়ে নাও। (সূরা মায়িদা-৪২) বিচারটি তাদের বিধানের উপর ছেড়ে দেন। নবী সা. বলেন, যে ব্যক্তি কোন জিম্মিকে কষ্ট দিবে, আমি তার বিরুদ্ধে দাঁড়াব। আবু দাউদ ও বাইহাকীর বর্ণনায় এসেছেÑযে ব্যক্তি কোন চুক্তিবদ্ধকে নিপীড়ন করবে, তার ক্ষতিসাধন করবে, কিংবা সাধ্যের অতিরিক্ত কোন দায়িত্ব তার ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে, অথবা তার থেকে অনিচ্ছায় কোন কিছু কেড়ে নেবে, কেয়ামত দিবসে আমি তার বিরুদ্ধে দাঁড়াব (আবু দাউদ-২৬৫৪)।
ইসলামে চিন্তার স্বাধীনতা ও কর্মের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে কালচারাল, জ্ঞান শাস্ত্র, ও স্বাধীন মত প্রকাশেরও স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। রাসুল সা. হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি তার সাহাবাদের থেকে সত্য বলা, ও তাদের দ্ব্যর্থহীন মত প্রকাশের প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন। তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন যে, উপদেশকে তারা প্রাধান্য দেবেন। আল্লাহর পথে ভয় করবেন না কোন ভর্ৎসনাকারীর ভর্ৎসনাকে। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পৃথিবীতে স্কাধীনভাবে বিচরণের ক্ষমতা দিয়েছেন অধিকার দিয়েছেন, তিনি বলেন, তিনিই তো তোমাদের জন্য ভূমিকে সুগম করে দিয়েছেন, অতএব তোমরা তার দিগ-দিগন্তে বিচরণ কর এবং তার প্রদত্ত জীবনোপকরণ হতে আহার্য গ্রহণ কর, এবং তারই পানে তোমরা পূনরুত্থিত হবে (সূরা মুলক- ১৫) তাইতো আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি রক্ত নদী পাড়ি দিয়ে। এ মুক্তি ও স্বাধীনতার পক্ষে ইসলাম। ইসলামেরও পক্ষে এ মুক্তি ও স্বাধীনত।
লেখক: কবি সাংবাদিক ও গবেষক