মাসুদ আলম : রাজধানীর মিরপুর ১২ নম্বর ইলিয়াস মোল্লার বস্তিতে ভয়াবহ আগুনে প্রায় পাঁচ হাজার ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গতকাল সোমবার ভোর ৪টায় বস্তির কোনো একটি ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২১টি ইউনিট সাড়ে ৩ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে সাড়ে ৭টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে বস্তির বাসিন্দাদের দাবি পরিকল্পিতভাবে বস্তিতে আগুন লাগানো হয়েছে। বস্তির ঝিলপাড় বা ওয়াপদা অংশ থেকে গ্যাস বিস্ফোরণ অথবা চুলার আগুন থেকে সূত্রপাত হয়। আগুনের কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ জানতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ৭০ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠা বস্তিতে প্রায় ৮ হাজার ঘর ছিল। যেখানে ২৫ হাজার মানুষের বসবাস। এর মধ্যে প্রায় ৫ হাজার ঘর পুড়ে গেছে। বস্তির অধিকাংশ বাসিন্দা পোশাক শ্রমিক।
ঘটনার সময় অধিকাংশ বাসিন্দা ঘুমন্ত ছিল। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় পরণের পোশাক ছাড়া কিছুই নিয়ে বের হতে পারেনি বাসিন্দারা। তাড়াহুড়া করে বের হতে গিয়ে নারী,পুরুষ ও শিশুসহ ১৫ জন আহত হয়েছে। বস্তিতে যাওয়ার রাস্তাগুলো সরু হওয়ায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৫শ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে ইলিয়াস মোল্লার নির্মাণাধীন ভবনে। বস্তির বাসিন্দা শাহিদা বেগম বলেন, স্বামী-স্ত্রী তারা দু’জনই গার্মেন্টসে চাকরি করেন। রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তারা। কিছুক্ষণ পরই আগুন আগুন বলে চিৎকার শুনতে পান। এ সময় ঘুম ভেঙে গেলে দরজার সামনে আগুন দেখে দিশেহারা হয়ে দু’জনেই দৌড়ে প্রাণ বাঁচান। গত আট বছর ধরে এই বস্তিতে থাকে তারা। বাড়িতে ঘর বানানোর জন্য জমানো ৯০ হাজার টাকাও পুড়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের (ঢাকা বিভাগ) উপ-পরিচালক দেবাশিষ বর্ধনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন, উপ-সহকারী পরিচালক মামুন মাহমুদ ও সিনিয়র স্টেশন (মিরপুর) অফিসার মো. আরেফিন।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস) মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে বস্তিতে আট হাজারের মতো ঘর ছিল। আগুনে তার ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশই পুড়ে গেছে। তবে আগুনের কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা বলেন, বস্তিতে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বসবাস, যাদের বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। তাদের একটি বড় অংশ কাজ করেন মিরপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানায়।