আনিসুর রহমান তপন : বাংলাদেশে ১৫ বছরের নিচে বয়সী মেয়েদের বাল্যবিয়ের হার ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর ১৮ বছরের নিচে এমন বিয়ের হার মাত্র ৪৭ শতাংশ। ২০১৭ সালের জরিপে এমন তথ্য দিয়েছে, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস)।
অথচ সম্প্রতি ‘বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ বেড়েছে’ শিরোনামে ‘প্রথম আলো’ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার ৫২ থেকে বেড়ে ৫৯ শতাংশ হয়েছে। যা কোনো ভাবেই সত্য নয় উল্লেখ করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি প্রতিবেদনে যে তথ্য-উপাত্ত দেয়া হয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করছি। তিনি বলেন, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষ’ন্ন করে এমন প্রতিবেদন প্রকাশের আগে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম ও প্রতিবেদকের আরো দায়িত্বশীল হওয়ার দরকার ছিল। প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেদনের সোর্স হিসেবে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফের কথা বলা হয়েছে। এরপর আমি ইউনিসেফের ঢাকা অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারেনি। খুবই পুরাতন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাই এই প্রতিবেদনটি আমি কোনোভাবেই গ্রহণ করতে পারি নাই।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের পরিমাণ কমেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর ২০১৫ সালের মাণ্টিপল ক্লাস্টার সার্ভে অনুযায়ী বাংলাদেশের বাল্যবিয়ের পরিমাণ কমেছে। এই জরিপে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালে দেশে বাল্যবিয়ের পরিমাণ ছিল ৬৪ দশমিক এক শতাংশ। ২০১৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫২ দশমিক তিন শতাংশে।
বর্তমান সরকার মনে করে বাল্যবিবাহ নারীর ক্ষমতায়নের অন্যতম অন্তরায়। এটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন উল্লেখ কওে চুমকি বলেন, প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে অনুষ্ঠিত গার্ল সামিটে ঘোষণা দিয়েছেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ১৫ বছরের নিচে বিয়ে সম্পূর্ণ বন্ধ করা হবে এবং এই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনসহ প্রশাসনের সব স্তরে বাল্যবিবাহের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে উল্লেখ কওে মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, আমরা বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি।
সার্বিক নারী উন্নয়ন সূচকে ১৪৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৪তম জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের মতো বিশ্বেও কোন দেশ নারী উন্নয়নে এতটা সাফল্য লাভ করেনি।
নারী দিবসের ঠিক আগের দিন ৭ মার্চ রাজধানীর বাংলামোটরে একজন নারীর লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাকে অত্যন্ত পীড়াদায়ক ও অমার্জনীয় অপরাধ উল্লেখ করে জড়িতদেও কঠোর শাস্তি দাবি করেন চুমকি। এঘটনায় তীব্র নিন্দা, ধিক্কার ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক সচিব নাছিমা বেগমসহ বাংলাদেশে ইউনিসেফের কান্ট্রি ডিরেক্টর এডওয়ার্ড বিগবেডার উপস্থিত ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। সম্পাদনা:হুমায়ুন কবির খোকন