ব্ল্যাক বক্স থেকে অনেক তথ্য বের হয়ে আসবে ‘লাশ শনাক্ত করাই বড় চ্যালেঞ্জ’
ইসমাঈল হুসাইন ইমু : নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভূবন সোমবার বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজের নিহত আরোহীদের লাশ শনাক্তই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। ইতিমধ্যে যাত্রীদের ৪৬ স্বজন গতকাল কাঠমান্ডুতে পৌঁছেছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে তাদের কাছে লাশ হন্তান্তর করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ইউএস-বাংলার জিএম (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে আমাদের ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল নেপাল গেছেন। তারা দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিভিন্ন হাসপাতালে যাবেন। এরপর সব প্রক্রিয়া শুরু হবে। বাংলাদেশ ও নেপাল সরকার এ কাজে সম্পৃক্ত আছে। কামরুল বলেন, যেহেতু বার্ন ইস্যু রয়েছে, তাই মরদেহ চিহ্নিত করতে বেশকিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। শতভাগ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতেই হবে।
ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়া পাইলট-এটিসির কথোপকথনের বিষয়ে আপনারা নিশ্চিত কি নাÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ককপিটের তথ্য ছাড়া এটা নিশ্চিত হওয়ার কোনো উপায় নেই। আমরা প্রথম থেকেই সন্দেহের কথা বলছি। আমরা চাই আন্তর্জাতিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত বিষয় বের হয়ে এসে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন হোক। এ তদন্তের জন্য কতদিন লাগতে পারে, তা বলা যাচ্ছে না। হতাহতদের চিকিৎসার সব ব্যয় ইউএস-বাংলা বহন করছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিভিল এভিয়েশন অথরিটির চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাইম হাসান বলেছেন, আর্মি, নেভি ও এয়ার ফোর্সের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কোনো প্রয়োজন হলে তারা সাহায্য করবে। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ লাশ শনাক্ত করা। অনেক দেশের যাত্রী সেখানে ছিল, শনাক্ত করা দরকার যাত্রী কোনো দেশের। তিনি আরও বলেন, ইউএস-বাংলা স্বজনদের নেপালে নিয়ে গিয়ে কাজটি ভালো করেছে। যাত্রী ও উড়োজাহাজের বীমা রয়েছে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের দুর্ঘটনা তদন্ত কবে নাগাদ শেষ হবে, তা নির্দিষ্ট করা বলা মুশকিল।
ত্রিভূবন বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে পাইলটের কথোপকথনের রেকর্ড প্রসঙ্গে সিভিল এভিয়েশনের এ চেয়ারম্যান বলেন, আমিও ইউটিউব থেকে শুনেছি। কিন্তু এগুলো ভেরিফাইড না। আমরা এনালাইসিস করছি। নেপালের সঙ্গে আমরা একসঙ্গে কাজ করবো। এখনই মন্তব্য করা যাবে না, মন্তব্য করা উচিতও না। আমাদের একটি প্রতিনিধি পাঠিয়েছি। নেপালের সঙ্গে আমরা কাজ করবো। মূল কাজটি করবে নেপাল। তিনি বলেন, ব্ল্যাক বক্সের তথ্য উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠালে তারা তথ্য উদ্ধার করতে পারবে। তখন অনেক তথ্য বের হয়ে আসবে। কোনো কিছুই গোপন থাকবে না। তবে, কবে না নাগাদ তদন্ত শেষ হবে, এটা বলা মুশকিল। কারণ বের করবো, এই ঘটনার যেন রিপিটেশন না হয়।
এ ধরনের ঘটনার পর দুটি করণীয় আছে উল্লেখ করে নাইম হাসান বলেন, একটি হলো তদন্ত, অন্যটি হচ্ছে হতাহতদের দ্রুত উদ্ধার করা ও লাশ শনাক্ত করা। তদন্ত অংশে আমরা তদন্ত করছি না, কারণ আমাদের এখতিয়ার নেই। নেপাল ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে। এছাড়া আমরাও একটি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছি।
উড়োজাহাজটির কোনো ত্রুটির বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে নাইম হাসান বলেন, সিভিল এভিয়েশনের সার্টিফিকেশন ছাড়া কোনও উড়োজাহাজ চলতে পারে না। এই উড়োজাহাজটি নেপালে যাওয়ার আগেও একটি ফ্লাইট করে এসেছে। আমরা অনেক সময় টেস্ট ফ্লাইট দেই, উড়োজাহাজ ঠিক আছে কিনা, তা চেক করা হয়। ওই দিন সকালে একবার ও পরে দুপুরে আরেকবার উড়োজাহজটি গিয়েছিল ফ্লাইটে। অতএব উড়োজাহাজটি ভালো ছিল, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। উড়োজাহাজের প্রত্যেক তথ্য আমাদের ফ্লাইট সেফটি বিভাগে থাকবে। পাইলট ইস্তফা দিয়েছিলেন, পরে জোর করে তাকে ফ্লাইটে দেওয়া হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে নাইম হাসান বলেন, কোনো পাইলটকে অপারেশনে রাখবে কি রাখবে না, এটা এয়ারলাইন্সের ব্যাপার। পাইলট যদি বরখাস্ত হয়, তাহলে মেন্টাল অ্যাফেক্ট থাকতে পারে। কিন্তু যদি পাইলট নিজে ইস্তফা দিয়ে থাকেন এবং মিচ্যুয়ালি ফ্লাইটে যান, এটা দোষের কিছু না।
পাইলট অতিরিক্ত ফ্লাইট করেছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নাইম হাসান বলেন, এটি পরিষ্কার হওয়ার জন্য পাইলটের লগবুক দেখতে হবে। আসলে তিনি কত ঘণ্টা ফ্লাই করেছিলেন। লগবুক না দেখে এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে না। ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান প্রসঙ্গে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান বলেন, ভেরি গুড পাইলট, আমার ছাত্র ছিলেন। ড্যাশ-৮-এ তিনি খুব ভালো ছিলেন।