কাঁচামালের ঘাটতি পূরণ হলে বাড়বে প্লাস্টিক পণ্যের রফতানি
স্বপ্না চক্রবর্তী : ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম শর্ত হচ্ছে দেশে তৈরি পণ্যের বিশ্ব বাজারে রফতানি। বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি তৈরি প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা বাড়ছে বিশ্ব বাজারে। কিন্তু প্লাস্টিক কাঁচামালের স্বল্পতার কারণে আশানুরূপ রফতানি করা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও রফতানির সাথে জড়িতরা। শুধু তাই নয় রফতানির ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ১০শতাংশ প্রণোদনার যথাযথ প্রয়োগও বাড়াতে হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো কর্তৃক প্রকাশিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা শীর্ষক এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৯৬.৩১শতাংশ। কিন্তু রফতানি হয় ৬৪.৯১শতাংশ। এতে করে লক্ষ্যমাত্রার চাইতে ৩২.৬০শতাংশ রফতানি কম হয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারারস এন্ড এক্সপোর্টারস এসোসিয়েশনের সভাপতি জসীম উদ্দিন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রো ক্যামিক্যালের দাম বাড়ায় প্লাস্টিক কাঁচামালের দামও বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে আমাদের উৎপাদনেও। এছাড়াও প্লাস্টিকসহ অন্যান্য পণ্যে সরকার কর্তৃক ১০শতাংশ প্রণোদনাও যথাযথভাবে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন এই নেতা। বলেন, যাদের বন্ড লাইসেন্স আছে তারাই রফতানিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে পণ্য রফতানিতে ১০শতাংশ প্রণোদনাও আমরা ভোগ করতে পারছি না। এতে করে আমাদের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও রফতানি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে আমি মনে করি।
এদিকে এই খাতের সাথে জড়িত ব্যাবসায়ীরা জানান, দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার শতভাগ পূরণ করেও বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক পণ্য বিদেশে রফতানি হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ের নানান সমস্যায় এ খাতের রফতানি সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। তবে অবকাঠামো সুবিধা ও গ্যাস-বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও নগদ সহায়তা পেলে এ খাত থেকে ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
ইপিবির তথ্যে দেখা গেছে, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে প্লাস্টিক পণ্য রফতানিতে প্রথম বড় সফলতা আসে। ওই সময়ে রফতানি থেকে আয় হয় ২কোটি ২০ লাখ ডলার। এরপর থেকেই রফতানি প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে খাতটি। প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তা ও রফতানিকারকরা জানিয়েছেন, রফতানি আয়ের পাশাপাশি জিডিপিতেও বড় ধরনের ভূমিকা রাখা এ খাতের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ওই এলাকায় প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় রফতানি কিছুটা কমেছে। এ ব্যাপারে দেশের প্লাস্টিক পণ্যের বড় কোম্পানী প্রাণ-আরএফএল এর জনসংযোগ কর্মকর্তা জিয়াউল হক বলেন, সার্বিক রফতানির বিষয়ে আমরা কিছু বলতে চাই না। তবে আমাদের কোম্পানী এই শিল্পের রফতানিতে লক্ষ্যমাত্রা বজায় রেখে চলেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিপিজিএমই) সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মো. ইউসুফ আশরাফ বলেন, সম্ভাবনাময় এ খাতের উন্নয়নে সরকারের নজরদারি বাড়ানো দরকার। এজন্য প্রয়োজনীয় নীতি-সহায়তা প্রয়োজন।
এদিকে বিপিজিএমই থেকে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ ১৫ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য (ওভেন খাতসহ) উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে। এ খাত থেকে প্রতি বছর সরকার পাচ্ছে আনুমানিক প্রায় এক হাজার ৫০০কোটি টাকার রাজস্ব। প্লাস্টিকের তৈরি প্রচ্ছন্ন রফতানি (মূলত তৈরি পোশাক পণ্যের অনুষঙ্গ হিসেবে রফতানি হওয়া প্লাস্টিক পণ্য) পণ্যের পরিমাণ প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। জানা যায়, দেশের পোশাক খাতের প্যাকেজিংসহ সব ধরনের উপকরণের শতভাগই দেশীয় উৎপাদকরা মেটাচ্ছেন। পরিবেশ বিপর্যয়কারী হিসেবে প্লাস্টিককে দোষারোপ করা হলেও বর্তমানে তা পরিবেশের পক্ষে সহায়ক বলে দাবি করছেন তারা। তারা বলছেন, প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের ফলে যে পরিমাণ বর্জ্য সৃষ্টি হয় তার প্রায় ৬০ শতাংশই এখন পুনর্ব্যবহার (রিসাইকেল) করা সম্ভব হচ্ছে। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব হোসেন