হাতিরঝিলে ওয়াটার ট্যাক্সি ও চক্রাকার বাসে বাড়ছে ভিড়
সাইফুল ইসলাম : হাতিরঝিল এখন রাজধানীর অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র পরিণত হতে যাচ্ছে। ইট পাথরের ঘেরা ক্লান্তিময় এই নগরীর এখন হাতিরঝিল ক্রমেই মনোরম হয়ে উঠছে। ক্লান্তির অবসান ঘুচাতে অনেকেই এখন সময় কাটান এখানে। ওয়াটার ট্যাক্সি চালু হওয়ায় যাতায়াতে যেমন ক্লান্তি কমেছে তেমনি নৌকা ভ্রমণের স্বাদ পাচ্ছেন রাজধানীবাসী। তাই ক্রমেই ভিড় বাড়ছে এই সার্ভিস দুটিতে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ব্রিটিশ রাজার ধারাবাহিকতায় ভাওয়ালের রাজাদের পোষা হাতি রাখা হতো পিলখানায় (বর্তমান বিজিবি সদর দফতর)। গোসলের সময় এসব হাতির ঝিলে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো এখনকার এলিফ্যান্ট রোড, হাতিরপুল এলাকা। হাতিদের আনাগোনার কারণেই এলাকার নামের সাথে ‘হাতি’ শব্দটি যুক্ত হয়ে গেছে। আর হাতি গোসল করানোর কারণে ঝিলের নাম হয় ‘হাতিরঝিল’। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ‘স্পেশাল ওয়ার্কস অরগানাইজেশন’র তত্ত্বাবধায়নে ‘বেগুনবাড়ী-হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প’ নামের এই প্রকল্পটির কাজ শুরু করা হয় ২০০৭ সালের মাঝামাঝি। ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন হাতিরঝিল প্রকল্প।
যান্ত্রিক ঢাকার মাঝে হাতিরঝিলের টলটলে পানি। সেই টলটলে পানির বুকে ছুটে যাচ্ছে যাত্রীবাহী ওয়াটারট্যাক্সি। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে চালু করা এই সার্ভিস। এটি যেমন দিচ্ছে মনোরম এক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, তেমনি যানজটহীন গুলশান থেকে কাওরান বাজারের দূরত্ব অতিক্রম করা যাচ্ছে সহজে। এখন হাতিরঝিলে ১৩টি ওয়াটার বাস চলছে।
হাতিরঝিল লেকে ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে। এ ট্যাক্সি চালুর ফলে বাড্ডা, গুলশান, রামপুরা, খিলগাঁওসহ নগরীর পূর্বাংশের মানুষ কাওরান বাজার, মগবাজার, দিলু রোড, ইস্কাটন, বাংলামোটর, তেজগাঁওয়ের যাতায়াত ব্যবস্থা আরো সহজ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ সার্ভিস বারিধারা লেক পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা চলছে।
হাতিরঝিলের ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে চালু করা হয় চক্রাকার বাস। চারপাশের মানুষের জন্য আছে চক্রাকার বাস সার্ভিস। বাস সার্ভিস চালু থাকে সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। বাসটি যাত্রা শুরু করে কাওরান বাজারের এফডিসি মোড় থেকে রামপুরা হয়ে শুরুর স্থানেই শেষ হয়।
হাতিরঝিলে সর্বমোট ৮টি বাস স্টপেজ রয়েছে। বাস রয়েছে ১২টি। এক স্টপেজ থেকে আরেক স্টপেজ পর্যন্ত ১০ টাকা। আর পুরো হাতিরঝিল ঘুরে আসতে লাগবে মাত্র ৩০ টাকা। এই বাস সার্ভিস শুধু বিনোদনের উদ্দেশে আসা মানুষদেরই নয় বরং অনেক চাকরিজীবী ও অন্যান্য পেশার মানুষদেরও জীবনযাত্রা সহজ করে দিয়েছে। তাই অফিস টাইম সন্ধ্যার পরে বাসের জন্য উপচেপড়া মানুষের লাইন দেখা যায়।
তবে প্রকল্পের দায়িত্বরত রাজউকের নির্বাহী প্রকৌশলী জামাল আক্তার ভুঁইয়া জানিয়েছেন প্রকল্পটির উন্নয়নে আরো কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এখনই পরিষ্কার করে কিছু বলতে চাননি তিনি। সম্পাদনা : ইকবাল খান