ঠাকুরগাঁওয়ের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নৌকায় ভোট দিন, সোনার বাংলা উপহার দিব
হুমায়ুন কবির খোকন ও ঠাকুরগাঁও থেকে সাইফুল ইসলাম প্রবাল : উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ফের নৌকায় ভোট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এলেই দেশের উন্নয়ন হয়, দেশের মানুষ উন্নত জীবন পায়। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নৌকায় ভোট চাই। নৌকায় ভোট দিন, সোনার বাংলা উপহার দেব। আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই। গত নির্বাচনে তিনটি আসনেই আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন। ২০১৮-এর ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে আমি আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই আপনার ওয়াদা করেন, হাত তুলে ওয়াদা করেনÑ নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে (বড় মাঠ) জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বক্তব্যের শুরুতে ঠাকুরগাওবাসীকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যত দূরেই থাকি না কেন, আপনারা আমার হৃদয়ে আছেন, আমাদের অন্তরে আছেন, আমাদের ভালোবাসায় স্থান করে নিয়েছেন। মা-বাবা, ভাইবোন সব হারিয়ে বাংলার মাটিতে যখন ফিরেছি, আপনাদের মাঝেই পেয়েছি; আমার হারানো স্বজনদের ¯েœহ-ভালোবাসা। আপনারা সব বাধা উপেক্ষা করে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে নৌকায় মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের ক্ষমতায় আনার জন্য আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাই। আসলে নৌকায়ই তো মানুষকে দেয়। নুহ নবীর নৌকা; মানবজাতি ও জীবজন্তুকে রক্ষা করেছিলো।
তিনি বলেন, বিএনপির ওই যে ফখরুল ইসলামÑ দিনরাত মিথ্যা কথা বলে মুখ ফুলিয়ে ফেলে। বার বার গলার চিকিৎসা করতে হয়। মিথ্যা বলার সীমা আছে। এত মির্থ্যা বললে আল্লাহও নারাজ হয়। তিনি যে বিমান প্রতিমন্ত্রী ছিলেনÑ বিমানের কী উন্নয়ন করেছে? বিমানের প্লেন চলে না। লুটপাট আর সব কিছু ধ্বংস করে রেখে গেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আন্তর্জাতিক মানের ৮ খানা বিমান ক্রয় করেছি। আরও ২টি নতুন আসবে। এই যে সৈয়দপুর বিমানবন্দন বন্ধ করে দিয়েছে বিএনপি। বিমানমন্ত্রী এই এলাকার অথচ এই বিমানবন্দর বন্ধ করে দিয়েছে। রাজশাহী ও বরিশাল বিমানবন্দরও বন্ধ করেছে, আমরা এসে চালু করেছি। আপনারা বুঝতে পারেনÑ এদের কাজটা কী? এরা ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে জানে না। এরা মানুষেরটা লুটপাট করে খেতে জানে, মানুষকে দিতে জানে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নতি হোক আমরা সেটা চাই। বিনা পয়সায় বই দেই। আপনাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করান, সে বই দেয়ার দায়িত্বও আমরা নিয়েছি। ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২ খানা বই বিনা পয়সায় ১ জানুয়ারি আপনাদের ছেলেমেয়েদের হাতে তুলে দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আমলে ৫ বার বাংলাদেশ বিশ্বে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। খালেদা জিয়া ও তার ছেলে বিশ্বে বাংলাদেশের টাকা লুট করে পাচার করেছে। অ্যামেরিকা ও সিঙ্গাপুর কোর্ট ধরেছে। আমরা সেখান থেকে জনগণের টাকা তাদের হাতে তুলে দিয়েছি। আর সমগ্র বাংলাদেশে তারা তা-ব চালিয়েছে। পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ঠাকুরগাওয়ে ৩৭টি প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। আরও ৩৮টির ভিত্তিস্থাপন করেছি। এগুলোর কাজ চলতে থাকবে। এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য আমরা ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। যেসব কলেজে একাডেমিক ভবন নাই, তা করে দেব। যেসব উপজেলায় সরকারি কলেজ নাই, করে দিচ্ছি। ঠাকুরগাওয়ে যাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় হয়, সেই ব্যবস্থা করে দেব।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিম-লীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, পররষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ক্রিক, যুব মহিলালীগের অধ্যাপিকা অপু উকিল, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
১৭ বছর পর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনে উৎসবের আমেজ ছিল ঠাকুরগাওয়ে। দুপুর ১২টায় তিনি ঠাকুরগাঁও এসে পৌঁছন। বিকাল ৩টায় তিনি জনসভার মঞ্চে আসেন।