সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগের আগে নীতিমালা চান আইনজীবীরা
এস এম নূর মোহাম্মদ : শিগগিরই সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি আগামী এপ্রিলের মধ্যেই এ নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হতে পারে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। গত ২ ফেব্রুয়ারি দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ পান আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। এ নিয়োগের পরই মূলত সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি আলোচনায় আসে।
সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নিয়োগের পরই আপিল বিভাগের জ্যৈষ্ঠ বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা পদত্যাগ করেন। এই পদত্যাগের পর এখন আপিল বিভাগে বিচারকের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪জনে। তবে এর আগে আপিল বিভাগে সর্বোচ্চ ১১ জন বিচারপতি বিচারকাজ পরিচালনা করেছেন। তবে মামলা জটের বিষয়টি চিন্তা করে আপিল বিভাগের জন্য আরও একটি এজলাস তৈরি করা হয়েছে বেশকিছু দিন আগে। কিন্তু বিচারক সংকটের কারণে সেখানে তৃতীয় বেঞ্চ বসা সম্ভব হচ্ছে না।
অন্যদিকে হাইকোর্ট বিভাগে বর্তমানে বিচারপতি রয়েছেন ৮২ জন। এর বাইরে আরও বেশ কয়েকটি এজলাস তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু বিচারপতি নিয়োগ না হওয়ায় সেগুলো এখন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আপিল বিভাগে বেশকিছু সাংবিধানিক মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এসব মামলা নিষ্পত্তি করতে বিচারক নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই বলে জানান আইনজীবীরা।
তবে বিচারপতি নিয়োগের আগেই নিয়োগ নীতিমালা তৈরির দাবি জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা। জানতে চাইলে ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, দুই বিভাগেই বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া দরকার। এর আগে একটি নীতিমালা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে ছিল। রাষ্ট্রপতির কাছে গেলে সেটি হয়ে যেত। এখন কি অবস্থায় আছে জানিনা। তবে নীতিমালা থাকা ভাল।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ ও সর্বোপরি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে অবিলম্বে নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার। বাংলাদেশের মানুষ সর্বোচ্চ আদালতের বিচার পাওয়ার অপেক্ষায় থাকেন। সেজন্য দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির প্রতি অকৃত্রিম আনুগত্য থাকতে হবে এবং মেধা সম্পন্ন, পেশাগত দক্ষতা, সুক্ষ্ম বিচারশক্তি ও ন্যায়পরায়ণতা সম্পন্নদেরই কেবল নিয়োগের দাবি করেন তিনি। ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, কোনো দলবাজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ হোক সেটা আমরা চাই না। সৎ, দক্ষ, মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগের পরামর্শ দেন বারের এই সম্পাদক।
সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সরকার ১০ জনকে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে ২ বছরের জন্য নিয়োগ দেয়। তাদের মধ্যে গত ডিসেম্বরে একজন মারা যান। আর একজনকে বাদ দিয়ে বাকি ৮ জনকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয় সরকার। বর্তমানে স্থায়ী নিয়োগ না পাওয়া দুই বিচারপতির রিট আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে আপিল বিভাগে। ২০১৫ সালের পর গত আড়াই বছরে উচ্চ আদালতে আর কাউকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। যদিও ২০১৬ সালের আগস্টে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর উভয়পক্ষের সম্মতিক্রমে সেপ্টেম্বরে প্রধান বিচারপতির কার্যালয় থেকে হাইকোর্টে নিয়োগের জন্য ৮ জনের নাম প্রস্তাব করে সুপারিশ পাঠানো হয়। কিন্তু তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।