কানাডার রিপোর্ট : ‘সুচি বা অন্যরা যুদ্ধাপরাধের ঊর্ধ্বে নয়’
মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে
মিয়ানমারের কোনো রাজনীতিক, এমনকী নোবেলজয়ী অং সান সুচিও তার দেশে সংঘটিত সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত পরিচালিত তদন্তের ঊর্ধ্বে নয়। সেকথাই বলেছেন গত মঙ্গলবার রাজধানী অটোয়ায় পার্লামেন্ট হিলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কানাডার মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি বব রে। তিনি সেখানে তার রোহিঙ্গা বিষয়ক ৩৯-পৃষ্ঠার রিপোর্টটি তুলে ধরেন। সেটিকে স্বয়ং টুইটবার্তায় স্বাগত জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। পাশাপাশি তার দফতর থেকে প্রচারিত বক্তব্যে ট্রুডো জানান, ‘কানাডা এই সংকট নিরসনে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। আগামী কয়েক সপ্তাহের মাঝেই রিপোর্টের প্রস্তাবনাগুলো খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। কেননা রিপোর্টে লাখো রোহিঙ্গা কমিউনিটিসহ অপরাপর ধর্মীয়গোষ্ঠী, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা এবং নারী ও বালিকার ক্ষেত্রে সংঘটিত অবর্ণনীয় মানবাধিকার লংঘন ও গভীর মানবিক বিপর্যয়ের প্রতি সবিশেষ সচেতনতা জাগিয়েছে’।
তবে বব রে বলেন, এই জনস্রোতপূর্ণ অভিবাসন সংকট নিরসন ও সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের তদন্ত পরিচালনায় কানাডার নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রাখা উচিত। একইসঙ্গে বলেন, কানাডার উচিত মিয়ানমারের সামরিকজান্তার নৃশংস তা-বে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া ৭ লাখ রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীকে উদ্বাস্তু মর্যাদা প্রদান ও তাদের পুনর্বাসন করা। তবে লক্ষণীয়ভাবে রোহিঙ্গা নিপীড়নে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচিত সুচির অমানবিক নীরবতা কীভাবে দেখা হবে, তা রিপোর্টে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
কিন্তু সুচির ওই নীরবতা প্রসঙ্গে বব রে বলেন, আশা করি তিনি তৎপর হবেন। তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনায় জড়িত বেসামরিক বা সামরিক সরকারের কেউ বাদ যেতে পারেন না। আমি কাউকেই বাদ দিচ্ছি না’। পাশাপাশি নিরপেক্ষ তদন্তের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘আমি মনে করি তার সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল’। সেজন্য রিপোর্টে মিয়ানমার সরকারের প্রতি দায়িত্বটি যথাযথ পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রতিথযশা রাজনীতিক দুই দফায় মিয়ানমার সফর করেছেন এবং তার উপস্থাপিত রিপোর্টে চলমান ঘটনাবলীকে ‘ধীর গতির গণহত্যা’ হিসেবে চিত্রিত করেছেন। বব রে পরামর্শ রেখে বলেন, জাতিসংঘের গণহত্যা তদন্তে কানাডার উচিত সমমনা দেশগুলোকে নিয়ে একটি নেতৃত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা। এক্ষেত্রে তিনি এক দশক আগে জাতিসংঘে কানাডার প্রস্তাবিত ও গৃহীত ‘রেসপনসিবিলিটি টু প্রোটেক্ট ডকট্রিন’ বা নিরাপত্তাবিধানের দায়িত্বটি উল্লেখ করেন, যদিও তার প্রায়োগিক দিকটি সিরিয়ায় পুরোপুরি ব্যর্থ হওয়ায় সমালোচনার উদ্রেক করেছে।
বলাবাহুল্য, আলোচ্য রিপোর্টটি যেমন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো স্বাগত জানিয়েছেন, তেমনি সাহায্য সংস্থা ও অধিকার গ্রুপগুলোও স্বাগত জানিয়েছে; কারণ, তাতে কানাডার নেতৃত্বদানের মতো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
ই-মেইল : [email protected]