
ধর্ম অধর্ম ইসলামে মধ্যমপন্থার বিশেষ আখ্যান
ওমর শাহ
ইসলামকে কোনো অভিধান দিয়ে বোঝার বা আত্মস্থ করার উপায় নেই। ইসলাম সমস্ত কল্যাণের আধার। যা কিছু কল্যাণকর, সুন্দর, সত্য, মানবিক, প্রায়োগিক ও ব্যবহারিক, তা-ই ইসলামের উপপাদ্য বা আলোচনা ও পালনের বিষয়। ইসলামে যেমন বাড়াবাড়ি নেই, তেমনি ছাড়াছাড়িও ইসলামের স্বভাববিরোধী কাজ। যুগের সবধরনের বেদাত, গোমরাহি, কু-আকিদা, বদআমলের পেছনে চিন্তাভাবনা করলে তার মূল কারণ হিসেবে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িটাই অনায়াসে বেরিয়ে আসে। অথচ ইসলাম কোনোভাবেই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করাকে পছন্দ করে না। বরং এ বিষয়ে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। বাড়াবাড়িগুলি যদিও প্রথমে অতি স্বাভাবিক বোধ হয় এবং মানুষ তাতে খুব বেশি গুরুত্ব না দেয়, কিন্তু এগুলোই ধীরে ধীরে একদিন ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও জাতিকে সিরাতে মুস্তাকিম তথা দীনের মধ্যমপন্থা থেকে দূরে সরিয়ে ফেলে। ধর্ম নিয়ে এমনই সব বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ি বিষয়ক গবেষণা ও পর্যালোচনাধর্মী গ্রন্থ ‘ধর্ম অধর্ম’। লিখেছেন ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ ও ঢাকার জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগের সাবেক কৃতি ছাত্র; মুজাহিদে আজম আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.) প্রতিষ্ঠিত গওহরডাঙ্গা মাদরাসার ফতোয়া ও আরবি সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক এবং বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের বাঙলা, উর্দু ও হিন্দিভাষার শীর্ষ জাতীয় দৈনিকসমূহের ফিচার লেখক, পাঠকনন্দিত সব্যসাচী তরুণ মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ি বিষয়ক এ পরিবেশনায় রয়েছে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ির পরিচয়, তার নিন্দা ও নিষেধাজ্ঞা, ভিত্তি ও প্রারম্ভিকতা, বাড়াবাড়ির কারণ-অকারণ, বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ির কুফল ও আকার-আকৃতি এবং আজকের সমাজের বাস্তবতাসহ কুসংস্কারমূলক হালচিত্রের কথকতা।
বর্তমানে ধর্মীয় বিষয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা পদ্ধতিতে বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ির সৃষ্টি হতে দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি বহুদূর গড়িয়েছে। যার ফলে মূর্খরা ধর্মীয় কিছু শাখা-প্রশাখায় এমনভাবে আসন গেড়েছে, যেনো তারা ধর্ম ও জান্নাত-জাহান্নামের ঠিকাদার বনে গেছে। এরাই মূলত উম্মতের মাঝে সৃষ্ট আজকের এই দলাদলির মূল কারণ। ১৬০ পৃষ্ঠার বইটিতে এমনই সব দলান্ধ ও গোঁড়ামনাদের পরিচয়, তাদের গোঁড়ামির কারণ ও কুফল ফুটে উঠেছে দারুণভাবে। হালে জনজীবনে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ির এ ব্যাধি। কেউ ধর্ম নিয়ে খুব বাড়াবাড়ির শিকার হচ্ছে, কেউ বা শৈথিল্য প্রদর্শন করে ধর্মের নামে অধর্মীয় কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ছে। এহেন পরিস্থিতিতে জাতি হয়ে পড়েছে বড়ই দিশেহারা। কোনটা ধর্ম, কোনটা অধর্মÑ পার্থক্যজ্ঞান করতে পারছে না সহজেই। সময়ের প্রচলিত এমনই কিছু অপ্রিয় সত্য ও বাস্তবতার চমৎকার উপস্থাপনা রয়েছে গ্রন্থটিতে। বিশুদ্ধ ইসলামমতে সর্বমহলের জীবন পরিচালনার জন্য খুবই উপযোগী ও দরকারি বইটি। গ্রন্থটিতে গাইরে মুকাল্লিদিন, বে-শরা পীর-ফকির, মাজারপূজারি, তাবলিগজামাতে উদ্ভাবিত কিছু অন্ধ লোকের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে বিশেষভাবে। তাদের সেসব বাস্তবধর্মী কার্যকলাপ তুলে ধরে লেখক তার জবাব প্রদান করেছেন দলিলভিত্তিক। ১২০ টাকা মূল্যের বইটির প্রচ্ছদ, বাঁধাই বেশ নান্দনিক। নজর পড়তেই এক লহমায় পাঠককে আকর্ষিত করবে অনায়াসে। আরবি, উর্দু ও হিন্দিভাষার বেশ কিছু গ্রন্থের সহায়তায় লেখা বইটি খুব জ্ঞানগর্ভ, সময়োপযোগী ও গুরুত্ববহ। পরিশীলিত ও পরিমার্জিতভাবে তথ্যপঞ্জির ফিরিস্তি টানা হয়েছে বইয়ের পাতায় পাতায়। আশা করি, বইটি মুসলমানদের অনেক ভুলভ্রান্তির অপনোদনের সঠিক দিকনির্দেশনায় কাজে আসবে; পাঠকদের ধর্মীয় জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করতে উত্তম সহযোগী হবে। দিশা দেবে ধর্মের নামে অধর্মীয় সব কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সঠিক পথপন্থার।
নন্দিত প্রচ্ছদশিল্পী কাজী যুবাইর মাহমুদের আঁকা প্রচ্ছদে আবৃত ও সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘দারুল ইশাআত’ প্রকাশিত বইটি ঘরে বসে পেতে দারুল ইশাআতসহ রকমারি, খিদমাহ ও কিতাবঘরে অর্ডার করা যাচ্ছে। এছাড়াও নিউ দিল্লির গান্ধি বুকশপ, কলকাতার কলেজ স্ট্রীট ও ঢাকার বাংলাবাজারসহ বইটি পাওয়া যাবে বাংলাদেশ ও কলকাতার সব অভিজাত লাইব্রেরিতে।
