
খাবারে দস্তরখানের উপকারিতা
মোস্তফা কামাল গাজী
খাবার মহান আল্লাহ তায়ালার অমূল্য নেয়ামত। আমরা যাতে খাবারের মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় করে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করতে পারি ও তাঁর শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে পারি, সেজন্য তিনি এ অমূল্য নেয়ামতটি দান করেছেন আমাদের। কারো সাধ্য নেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটি খাবারের দানা সৃষ্টি করার। তাই খাবারের সম্মান দেয়া ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। খাবারকে সম্মান দানের একটি দিক হলো, দস্তরখানের ওপর রেখে খানা খাওয়া। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) পায়া বিশিষ্ট বড় পাত্রে খাবার খেতেন না। হজরত কাতাদা (রা.)কে জিজ্ঞেস করা হলো, তাহলে কিসের উপর খানা খেতেন? তিনি বললেন, ‘চামড়ার দস্তরখানের উপর।’ (বুখারি ৫৩৮৬)
দস্তরখানের ওপর খাবার রেখে খাওয়ার অন্যতম উপকারিতা হলো, খাবার নষ্ট না হওয়া। খাবার হাতে রেখে হেঁটে হেঁটে খাওয়া সভ্য মানুষের কাজ নয়। এতে খাবার নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। আর দস্তরখানে খাবার রেখে মার্জিত ভঙ্গিতে খাবার গ্রহণ করলে একদিকে যেমন সুন্নত আদায়ের সওয়াব অর্জন হয়, অপর দিকে মার্জিত ও সভ্য জীবনের অনুশীলনটাও হয়ে যায়। কুরআনে অপচয় থেকে বেঁচে থাকার সরাসরি নির্দেশ এসেছে। খাবারের ক্ষেত্রে অপচয় থেকে বাঁচার অন্যতম মাধ্যম হলো দস্তরখান। কারণ দস্তরখানার উদ্দেশ্যই হলো, খাবার পড়ে গেলে তা উঠিয়ে খাওয়া।
মাটিতে দস্তরখানা রেখে খাবার খাওয়া সরল ও নিরহংকার মানুষের স্বভাব। দস্তরখানা ছাড়া খাদ্যের প্রতি অবহেলা প্রকাশ পায়। অবহেলায় অহংকারের জন্ম হয়। অহংকারীরা কোন কিছুকে সম্মান দিতে জানে না। দস্তরখানা বিছালে খাবারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন প্রকাশ পায়। এতে অহংকারের আশঙ্কা থাকে না। খাদ্যের পূর্ণ উপকার লাভের জন্য খাদ্যের প্রতি ভক্তি থাকা অপরিহার্য। দস্তরখানে খাবার রেখে খেলে খাদ্যের প্রতি ভক্তি ও আগ্রহ প্রকাশ পায়; দস্তরখান ছাড়া খাবারে যা অনুপস্থিত। তাই দস্তরখানের সুন্নত আদায়ের সঙ্গে খাদ্যে পুষ্টির নিশ্চয়তা অনায়াসেই বেড়ে যায়। তাছাড়া দস্তরখানে খাবার রাখলে যেহেতু একটু নিচু হয়ে খাবার খেতে হয়, এতে পেটে চাপ থাকে। মাত্রাতিরিক্ত আহার করে দেহে মেদ তৈরির আশঙ্কা কম থাকে। দস্তরখানের ওপর খাবার রেখা খাওয়া সুন্নতে মোয়াক্কাদা বটে, তবে কোন ধরনের দস্তরখানা সুন্নত এটা আমাদের বুঝতে হবে। না জানার ফলে আজকাল অনেককেই এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে দেখা যায়। ‘দস্তরখানা’ শব্দ সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার কারণেই দস্তরখানাকে আমরা ভিন্নভাবে চিত্রায়িত করছি। এটি একটি ফারসি শব্দ।’ ‘দস্তর’ শব্দ ব্যবহার করা হয়ে থাকে খাবারের ক্ষেত্রে। আর ‘খানা’ অর্থ হলো পাত্র, অর্থাৎ যে পাত্রের মধ্যে খাবার রেখে খাওয়া হয়ে থাকে সেটাকে বলা হয় দস্তরখানা। পাত্রের নিচে বিছানো চামড়া, প্লাস্টিক বা কাপড় তা আসলে দস্তরখানা নয়। কেননা খাবার এগুলোর উপর রেখে খাওয়া হয় না, বরং পাত্রে রেখে খাওয়া হয়। বিধায় ঐ পাত্রই দস্তরখান এবং সুন্নত এটাই। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর দস্তরখানা বিছানো ব্যাপারে যে হাদিস এসেছে, সেটাও ছিলো প্লেটের মতো চামড়ার দস্তরখানা সম্পর্কে। অর্থাৎ, চামড়ার প্লেটে শুকনো খাবার রেখে তিনি আহার করতেন; তার নিচে কিছু বিছাতেন না। অতএব খাবারের সময় প্রচলিত দস্তরখানা বিছানো বা লাল দস্তরখানা বিছানো সুন্নত হওয়ার ব্যাপারে যে কথা প্রসিদ্ধ, আছে তা ঠিক নয়। বরং খানা খাওয়ার উপযোগী যে কোন বস্তুর উপর খানা রেখে খেলেই এ সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। চাই তা কাঁচের পাত্র হোক বা মেলামাইনের প্লেট কিংবা অন্যকিছু। (ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা, পৃ: ৬৮-৭৬)
তথাপি প্লাস্টিক, চামড়া, কাপড় ইত্যাদি বিছিয়ে তার উপর খাওয়া নিষেধ নয়। এতে দোষের কিছু নেই। বরং বিছিয়ে নেয়াই ভালো। কারণ এতে খাবারের শান প্রকাশ পায়। তবে তা আবশ্যক মনে করা যাবে না।
