
মাহে রমজানের শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি
মাহফুয আহমদ
প্রকৃত অর্থে রমজান মুসলমানের জন্য আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ। একজন সত্যিকার মুসলমানের দায়িত্ব হলো, আল্লাহ প্রদত্ত ইবাদতের বিশেষ মৌসুমগুলোর জন্য পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করা। সুতরাং রমজানের ববরকতময় মাসের জন্য প্রস্তুতিস্বরূপ আমরা কিছু কাজ এখন থেকে শুরু করতে পারি।
এক. সঠিক পরিকল্পনা করা। রমজানকে কীভাবে নিষ্ঠা ও ইখলাসের সঙ্গে আমল ও ইবাদতের মাঝে কাটানো যায়- সে চিন্তা এখন থেকেই শুরু করে দেয়া। সেজন্য একটি লিস্ট তৈরি করা যেতে পারে। দৈনিক পুণ্যকাজের লিস্ট, যেমন, নির্দিষ্ট পরিমাণ কোরআন তেলাওয়াত, নির্দিষ্ট সংখ্যক গরিব-মিসকিনকে খাবার প্রদান ইত্যাদি এবং পুরো মাসব্যাপী পুণ্যকাজের লিস্ট, যেমন- নির্ধারিত কিছুদিনে আত্মীয়স্বজন, বয়োবৃদ্ধ ও অসহায় মানুষদের বাড়িতে খোঁজখবর নিতে যাওয়া, নিজের ঘরে দাওয়াত করা ইত্যাদি বিষয় মাথায় রাখা যেতে পারে।
দুই. শারীরিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা। এটাও খুব জরুরি। রমজান আসার আগেই শরীরকে রোজা রাখার উপযুক্ত করে রাখা। স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন থাকা। খাবারের রুটিনে কিছুটা পরিবর্তন করা বরং কিছু বিষয় কমিয়ে নিতে চেষ্টা করা। যেমন- দিনেরবেলা কয়েকবার কফি পানের অভ্যাস থাকলে রমজানের কিছুদিন আগ থেকে সেটা বন্ধ করে দেয়া; যাতে নতুন রুটিনের সঙ্গে শরীর খাপ খেয়ে যায়। তাছাড়া শারীরিক কোনো অসুস্থতা থাকলে দ্বীনদার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। প্রয়োজনে সম্পূরক মেডিসিন পূর্ব থেকেই গ্রহণ করতে থাকা।
তিন. রমজান প্রবেশের আগ থেকে নফল রোজা রাখতে শুরু করা। নবীজি (সা.) শা’বান মাসে প্রচুর রোজা রাখতেন। প্রতিদিন রোজা রাখার দরকার নেই। যেসব দিনে রোজা পালন করা নবীজির সুন্নত ছিল, সেসব দিন হাতছাড়া না করা। যেমন, প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার এবং হিজরি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ ইত্যাদি। এতে করে রোজার ওপর শরীরের একরকম ট্রেনিং হয়ে যাবে। অন্যদিকে বিগত বছরগুলোর কোনো কাজা রোজা থাকলেও তা এখন আদায় করে নেয়া।
চার. বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা। এখন থেকেই মহৎ এই কাজটি শুরু করে দেয়া। প্রত্যহ আধা পারা, এক পারা কিংবা সম্ভব হলে আরও বেশি করে পড়তে থাকা। ফলত রমজানে বেশি বেশি কোরআন খতম করা সহজ হবে। সালাফে সালেহিন তথা আমাদের পুণ্যবান পূর্বসূরি মনীষীগণ রমজান আসলে কতবার কোরআন খতম করতেন- তা শুনলে আমাদের লজ্জা হয়। তাঁরা কেমন ছিলেন আর আমরা কেমন আছি! নির্ভরযোগ্য ইতিহাস গ্রন্থাদিতে সেসব তথ্য উদ্ধৃত হয়েছে। বোঝে বোঝে তেলাওয়াত করতে পারলে বেশ ভালো এবং প্রত্যাশিত, তবে না বোঝলেও পড়া জারি রাখা। কেননা কোরআন আল্লাহ তায়ালার কালাম। সুতরাং পবিত্র ঐশীবাণী পাঠ করলে তা হৃদয়ে রেখাপাত করবেই।
পাঁচ. প্রচুর নফল নামাজ আদায় করা। নফল নামাজে সাধ্যমতো বেশি কোরআন পাঠ করা এবং লম্বা নামাজ আদায় করতে সচেষ্ট হওয়া। এতে রমজানে তারাবিহের নামাজ আদায় সহজ হয়ে যাবে। নামাজের প্রতি আগ্রহ ও মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে। আর অবশ্যই পেছনের নামাজ কাজা থাকলে সেগুলোও আদায় করতে শুরু করে দেয়া।
ছয়. রমজান মাস এলে আমাদের প্রিয় নবী (সা.) প্রবাহিত বাতাসের গতির চেয়ে বেশিমাত্রায় দানখয়রাত করতেন। সুতরাং রমজানে অধিক দান করতে চেষ্টা করা। আর সেজন্য আগেই থেকে অনুশীলন করা। সামান্য হলেও প্রাত্যহিক একটা পরিমাণ আল্লাহর ওয়াস্তে খরচ করা। অন্যদিকে রমজানে কীভাবে বেশি দেয়া যাবে- সেই প্রস্তুতি নেয়া।
সাত. মোটকথা, এমন সংকল্প নেয়া যে, রমজানে যেন জীবনের গতিপথ বদলে যায় নিজের আমলের মাধ্যমে। চারিত্রিক উৎকর্ষতা ও আত্মিক পরিশুদ্ধি সর্বক্ষেত্রেই যেন রমজানের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের এসবের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
