
সুস্থতা আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত
দিলাওয়ার আহমদ কাসেমি
৭ এপ্রিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। সুস্থতা মহান আল্লাহ পাকের এক বিশেষ নিয়ামত। কেননা পৃথিবীর কোনো কিছুই ভালো লাগে না অসুস্থ ব্যক্তির। এজন্য বলা হয়, সুস্থই সকল সুখের মূল।
আল্লাহপাক তো মানুষ সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য। তাই ইসলামে স্বাস্থ্য ও সুস্থতার প্রতি সচেতন ও বিশেষ নজর রাখার তাগিদ করা হয়েছে। আমরা যদি এ নিয়ামতের মূল্যায়ন না করি তাহলে যেমন ব্যবহারিক জীবনে কাজকর্ম করার উদ্যমতা হারিয়ে ফেলব তেমনি প্রতিদিনের আবশ্যিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং ইবাদত-বন্দেগি আদায় করার শক্তি ও উদ্যমতা হারিয়ে ফেলব।
কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ অবশ্যই তাকে তোমাদের জন্য মনোনীত করেছেন এবং তিনি তাকে জ্ঞান ও স্বাস্থ্যে সমৃদ্ধ করেছেন।’ (সুরা বাকারা: ২৪৭)। এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা জ্ঞান ও স্বাস্থ্যকে রাজত্ব ও নেতৃত্ব লাভের মানদ- সাব্যস্ত করেছেন। কারণ জ্ঞান-প্রজ্ঞা, স্বাস্থ্য ও সুস্থতা ছাড়া কোন কাজই সুচারুরূপে সম্পাদন করা সম্ভব নয়।
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দুটি নিয়ামতের ব্যাপারে অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ। নিয়ামত দুটি হল, সুস্থতা ও অবকাশ।’ (সহিহ বুখারি: ৬৪১২, মুসনাদে আহমদ: ২৩৪০)
অন্য হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, অবশ্যই মানুষকে সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতার চেয়ে শ্রেষ্ঠ নিয়ামত আর কিছু প্রদান করা হয়নি।’ (সুনানে নাসায়ি: ১০৭২)। ইবাদতে মনোনিবেশের জন্য দেহ ও মনের সুস্থতার প্রয়োজন অনিস্বীকার্য। যে কারণে ইসলামে সুস্থ থাকার জন্য উৎসাহ সৃষ্টি করা হয়েছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দুর্বল মুমিনের তুলনায় শক্তিশালী মুমিন বেশি কল্যাণকর ও আল্লাহর কাছে বেশ প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। (সহিহ মুসলিম: ৬৯৪৫)।
অপর হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যুষে সুস্থতা নিয়ে ঘুম থেকে ওঠে, বাসায় নিরাপদে থাকে এবং সারা দিনের খাদ্য সামগ্রী তার নিকট মজুদ থাকে তাহলে থাকে পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ দেয়া হয়েছে।’ (সুনানে তিরমিজি: ২৩৪৬)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেন, ‘হে আমার উম্মত! পাঁচটি সম্পদ হারানোর আগে তার যথাযথ মূল্যায়ন করো: ১. মারা যাওয়ার আগেই তোমার জীবনের প্রতি মুহূর্তকে কাজে লাগাও। ২. বুড়ো হওয়ার আগে যৌবনকে কাজে লাগাও। ৩. দারিদ্র্যের আগে সচ্ছলতার মূল্য দাও। ৪. অসুস্থতার আগে সুস্থতার মূল্য দাও। ৫. ব্যস্ততার আগে অবসরকে কাজে লাগাও।’ (মুসতারেকে হাকিম: ৭৮৪৬)
ইসলামে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও চিকিৎসা সম্পর্কে কিছু দিকনির্দেশনা। এক. খাদ্য-পানীয় বিষয়ে অসচেতনতা মানুষের রোগ-ব্যাধি অন্যতম কারণ। তাই ইসলামে মধ্যপন্থা অবলম্বন ও অতিভোজন না করতে উৎসাহিত করেছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আহার করো ও পান করো কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ: ৩১) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, পেটের এক তৃতীয়াংশ খাদ্য দ্বারা, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৩৪৯) দুই. পরিবেশ দূষণের কারণে মানব সমাজে নানা রকম রোগ ছড়ায়। তাই ইসলামে সব কিছু পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে নির্দেশ করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা তিন অভিশপ্ত ব্যক্তি থেকে বেঁচে থাক, যে পানির ঘাটে, রাস্তার ওপর ও গাছের ছায়ায় মলমূত্র ত্যাগ করে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৬) অন্য হাদিসে মহানবী সা. বলে, তোমরা বাড়ির আঙ্গিনা সবদিকে পরিস্কার রাখবে। এহুদিদের অনুকরণ করবে না। তারা তো বাড়িতে আবর্জনা জমা রাখে।’ (সুনানে তিরমিজি: ২৭৯৯) তিন. কালিজিরা, মধু পান করা এবং শিঙ্গা লাগানো। মহানবী (সা.) বলেন, ‘কালিজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের উপশমক (উপকারী)। (সহিহ বুখারি: ৫৯২) আল্লাহপাক বলেন, এতে (মধু) মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার।’ (সুরা নাহাল: ৬৯) নবী করিম (সা.) তোমরা যা কিছু দিয়ে চিকিৎসা করো তার মধ্যে উত্তম হল শিঙ্গা লাগানো।’ (সহিহ মুসলিম: ৪০০৭)
এ ছাড়াও বিভিন্ন হাদিসে যেমন ইবাদত, ঘর-সংসার ইত্যাদি করতে বলা হয়েছে তেমনি স্বাস্থ্যের প্রতিও খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। কারণ শরীরিক সুস্থতা ও মানসিক স্বস্তির ওপরই কাজকর্ম, ঘর-সংসার এবং ইবাদত-বন্দেগি নির্ভরশীল। অতএব এ নেয়ামত যতœসহকারে রাখা আমাদের দায়িত্ব।
