নূর মাজিদ : ডক্টর কিম ওয়াগেনার কুইন মেরী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যের ইতিহাসের একজন স্বনামধন্য অধ্যাপক।২০১৪ সালে লন্ডনের মাইলস ইন্ডের নিজ অফিসে বসে ইমেইল পান ড. ওয়াগনার। ইমেইলটি করেছিলেন এক ব্রিটিশ দম্পতি যারা তাকে মাথার খুলি সম্পর্কে জানাতে চান। ১৯৬৩ সালে লন্ডনের কেন্ট অঞ্চলে লর্ড ক্লাইড নামক পানশালা কিনে নিলে তারা খুলীটিকে সেখানে আবিষ্কার করেন। খুলীটির অক্ষিকোটরে তারা একটি চিরকুট আবিষ্কার করেন, যেখানে দাবী করা হয়েছে খুলীটির মালিক ছিলেন হাবিলদার আলম বেগ। তিনি ছিলেন একজন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ৪৬ বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন বিদ্রোহী পদাধিক সেনা সদস্য। ১৮৫৮ সালে বর্তমান পাকিস্তানের শিয়ালকোটে স্থাপিত এক সামরিক আদালতের রায় অনুসারে কামানের মুখে তাকে উড়িয়ে দেয়া হয়। তবে চিরকুটে প্রাপ্ত এই তথ্যেই সন্তুষ্ট ছিলেন না আলম বেগের খুলীটির মালিক ঐ ব্রিটিশ দম্পতি। অনেক বছর ধরেই তারা ইন্টারনেটে আরো বিস্তারিত জানতে অনুসন্ধান চালিয়ে ব্যর্থ অবশেষে ডক্টর কিমের শরণাপন্ন হন। কিমকে ইমেইলে তারা জানান, এতদিন তারা তাদের পানশালার প্রদর্শনীতে বিপ্লবী আলম বেগের খুলীটি রেখেছিলেন। তবে,খুলীটির মালিকের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ব্যর্থ তারা এখন নিজেদের কাছে খুলীটি রাখতে অস্বস্তি বোধ করছেন।
ইমেইল পেয়ে অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গেই ঐ দম্পত্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন কিম। কিম আলম বেগের খুলীর সঙ্গে থাকা চিরকুটটি আবারো পড়েন। সেখানে লেখা ছিলো ১৭৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময় বিদ্রোহীদের হাত পলায়নরত এক ব্রিটিশ অফিসার এবং এক ওপর এক ব্রিটিশ ধর্মযাজক রেভারেন্ড হান্টারকে বেগ সপরিবারে গুলি করে হত্যা করেন। তবে ঠিক কি কারণে আলম তাদের হত্যা করেন সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছুই লেখা ছিলোনা। বিদ্রোহে বেগ সিপাহী দলের দলপতির ভুমিকাও পালন করেন। খুলীটির বিস্তারিত ফরেনসিক অনুসন্ধানের পর কিম এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেন যে ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার আলম বেগ একজন সুদর্শন ও শক্তিশালী জওয়ান ছিলেন। মৃত্যুকালে আলমের বয়স ছিলো মাত্র ৩২ বছর।
আলম বেগের মৃত্যুর পর কোন একজন ব্রিটিশ নাগরিক তার খুলীটিকে সংগ্রহ করে স্বারক হিসেবে যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসেন। তবে ঠিক কিভাবে ঐ পানশালায় খুলীটির স্থান হলো তা জানতে এখনও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন কিম ওয়াগেনার।
১৭৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলন হিসেবেই দেখা হয়। সেবারই প্রথম উপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে দেশী।