নামাযে তেলাওয়াত : অফুরন্ত তৃপ্তির স্বাদ
হাবীবুল্লাহ সিরাজ
তেলাওয়াতে কুরআন মুমিনের স্বাদ ও সুধা। মুমিন বান্দার শান ও মান। কুরআন তেলাওয়াতে মুমিনের ঈমানের প্রবৃদ্ধি ঘটে। ঈমানের মাঝে স্বাদ অনুভব হয়। উত্তাল হয় ঈমানের মহাসমুদ্র। এ বিষয়ে কুরআনের বাণী কতো বাঙময় ও ছন্দায়িত- ‘আল্লাহ নাযিল করছেন উত্তম বাণী এমন এক কিতাব যার বস্তুসমূহ পরস্পর সুসামঞ্জস্য (যার বক্তব্যসমূহ) পুনরাবৃত্তিকৃত, যারা তাদের প্রতিপালকের ভয় করে এর দ্বারা তাদের শরীর রোমাঞ্চিত হয়। তারপর বিগলিত হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে। বাস্তবতাও এমনই। সাহাবী ও আকাবির আসলাফদের অসংখ্য কাহিনী আছে যাতে বলা হয়েছে তেলাওয়াতে কখনো কাঁদতেন কখনো আশান্বিত হতেন কখনো আবার আল্লাহর ভয়ে শরীর কেঁপে উঠতো। হযরত আবু রাফে রহ. বর্ণনা করেন, একদিন আমি ওমর রা. এর পিছনে ফজরের পড়ছিলাম। আমি ছিলাম সর্বশেষ কাতারে। ওমর রা. সেদিন সুরা ইউসুফের তেলাওয়াত করছিলেন। তিনি যখন এ আয়াত তেলাওয়াত করেন- আমি তো নিজের অস্থিরতা ও দুঃখ আল্লাহর কাছে বলবো (সুরা ইুউসুফ- ৮৬) তখন এমন কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন যে, শেষ কাতার থেকেও আমি তার কান্নার আওয়াজ পূর্ণ শুনতে পাচ্ছিলাম (আল কাউসা আল কুরআনুল কারিম সংখ্যা) হযরত ওমর রা. এর ছোট্ট ঘটনা থেকে অনুধাবন করা যায় তেলাওয়াতের দ্বারা মুমিনগণ কী পরিমাণ রোমাঞ্চিত হন। তেলাওয়াতের মুগ্ধতায় ডুবে যাওয়াই আল কুরআনের চাওয়া। সেই তেলাওয়াত যদি নামাযে হয়! তাহলে তো কথা নেই, সেই ইবাদত হবে ‘সোনাই সোহাগা’ কবুলিয়াতের ভারিতে হবে ¯œানিত। বান্দা পাবে মাওলা প্রেমের অফুরান স্বাদ ও সুধা। প্রেমীয় বান্দারা নামাযে তেলাওয়াত করেন। এ ব্যাপারে উৎসাহবাণী রয়েছে হাদীস এবং তাফসীরের কিতাবাদিতে। আমাদের আকাবির আসলাফদের বরণীয় জীবনের আমলনামায়ও দেখা যায় নামাযে তেলাওয়াতে আগ্রহ ও মুগ্ধতা। কার উদাহরণ টানবো! ঈমাম আবু হানিফা রহ. সূর্যোজ্জ্বল ইতিহাসের একনাম। নামাযে তেলাওয়াত করতে করতে জীবন কাটিয়েছেন। এশার পর হতে নামাযে দাঁড়াতেন শুরু করতেন তেলাওয়াত চলতো ফজরতক। এভাবে জীবনের চল্লিশটি বছর কাটিয়েছেন নামাযের তেলাওয়াতে। এ ব্যাপারে কুরআনের আয়াত আরো সমুজ্জ্বল। আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের যে তালিকা করেছেন তাতে আছে- আর যারা রাতের গভীরে সিজদা ও কিয়াম করে তাদের প্রভুর আশায় (সুরা ফোরকান-৬৪) কিয়াম বলা হয় নামাযে তেলাওয়াতের দ-ায়মান সময়টুকু। সিজদা আর কিয়াম একত্রে আনার অর্থ হল নামায। নামাযে অনেক অবস্থা আছে। যেমন রুকু, সিজদা, কিয়াম, জলসা শুধু কেন এ দুটির উল্লেখ? কারণ হলো এ দুটিতে বান্দারা সময় বেশি ব্যয় করে। আর আল্লাহর কাছেও এদুটি অবস্থা খুব প্রিয়। সেজদা প্রিয়তর কেননা এর দ্বারা বান্দা তার অক্ষমতা আমিত্ব বড়ত্ব সব মিশিয়ে দিয়ে রাব্বে কারিমের উচ্চতা মহত্ব বড়ত্ব অবলীলায় স্বীকার করে নেয়। আর কিয়াম প্রিয়তর কারণ, কিয়ামের মধ্যে তেলাওয়াত করা হয়। আর কুরআন তেলাওয়াত মানে বান্দার সাথে আল্লাহর কথোপকথন। অন্য এ একটি আয়াতে নামাযে তেলাওয়াতের বিষয়টি আরো স্পষ্টতর- তারা রাতে বিনিদ্র রজনীতে কুরআন তেলাওয়াতে আর সিজদায় ঢুবে থাকে। (সুরা আল ইমরান- ১১৩) নামাযে তেলাওয়াত আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয় একটি ইবাদত। নফল ইবাদতের মাঝে তেলাওয়াতই উত্তম; তার উপর এ তেলাওয়াত যদি হয় নামাযে তা হলে কতো উত্তম হবে? এর কি অনুমান করা যায়? নামাযের মাঝে কুরআন তেলাওয়াত নামাযকে দামি থেকে দামি করে তুলে। আল্লাহর কাছে হয়ে ওঠে ভালোর ভালো। তাইতো হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দৈনন্দিন আমলতালিকার অন্যতম আমল ছিল নামাযে তেলাওয়াত। কী পরিমাণ তেলাওয়াত করতেন? এমন প্রশ্নে জবাব দিচ্ছেন উম্মুল মুমিননীন হরযত আয়েশা রা. অনেক সময় আমি নবীজির পিছনে সারারাত নামাজ পড়তাম। তিনি নামাযে সুরা বাকারা আল ইমরান, সুরা নিসাসহ লম্বা লম্বা সুরাগুলো পড়তেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দেখাদেখি সাহাবীদের মাঝেও এর অভ্যাস গড়ে ওঠে ছিল। তারাও নামাযের মাঝে প্রচুর কুরআন তেলাওয়াত করতেন।