
বিয়ে: পার্থিব ও পরকালীন কল্যাণের বাহক
মোস্তফা কামাল গাজী
আদর্শ পরিবার গঠন, জৈবিক চাহিদা পূরণ, মনে প্রশান্তি আনয়ন ও বংশ পরম্পরা অব্যাহত রাখতে বিবাহের গুরুত্ব অপরিসীম। বিবাহের দ্বারা মানুষ পাপকাজ থেকে বিরত থাকতে পারে। ইজ্জত-আব্রুর হিফাজত হয়। নীতি-নৈতিকতার উন্নয়ন ঘটে। সামাজিক অবক্ষয় রোধ হয়। চরিত্র ঠিক থাকে। কলঙ্কিত হওয়া থেকে বাঁচা যায়। মন ও মননে প্রশান্তি আসে। মানব জাতিকে অবৈধ মিলন থেকে বিরত রাখতে এবং হালালভাবে যৌন চাহিদা মেটাতেই মহান রাব্বুল আলামিন বিবাহের নির্দেশ দিয়েছেন। এটি পূর্ববর্তী নবীদেরও একটি সুন্নত কাজ। আমাদের আদিপিতা হজরত আদম (আ.) পৃথিবীতে আগমন করার পর মনের ভেতর কেমন একটা শূন্যতা ও একাকীত্ব অনুভব করতে থাকেন। তাঁর এই একাকীত্ব দূর করতে তাঁরই বাম পাঁজরের হাড় দ্বারা আল্লাহ তায়ালা হজরত হাওয়া (আ.)কে সৃষ্টি করেন। ফেরেশতাদের উপস্থিতিতে জান্নাতে তাঁদের বিবাহ সম্পাদন হয়। এতে হজরত আদম (আ.) মনে প্রশান্তি ও ভালোলাগা অনুভব করেন। দূর হয় একাকীত্ববোধ। এটাই ছিলো পৃথিবীর প্রথম বিয়ে।
হানাফি মাজহাবে মানুষের অবস্থাভেদে বিয়ে চার প্রকার।
১. ওয়াজিব বিয়ে
যদি দেহ-মনে জৈবিক চাহিদা থাকে আর এই পরিমাণ সামর্থ্য থাকে যে, স্ত্রীর ভরণপোষণ আদায় করতে পারবে, তখন বিয়ে করা ওয়াজিব। এ অবস্থায় বিয়ে থেকে বিরত থাকলে গুণাহগার হবে।
২. ফরজ বিয়ে
যদি ভরণপোষণের সামর্থ্য থাকার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা এতো বেশি থাকে যে, বিয়ে না করলে হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা, তাহলে বিয়ে করা ফরজ।
৩. সুন্নাত বিয়ে
যদি জৈবিক চাহিদা স্বাভাবিক থাকে, গুনাহে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা না থেকে এবং স্ত্রীর অধিকার আদায়ের সামর্থ্য রাখে তাহলে বিয়ে করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
৪. নিষিদ্ধ বিয়ে
যদি কারো আশঙ্কা হয় যে, সে স্ত্রীর অধিকার আদায় করতে পারবে না- চাই তা দৈহিক হোক বা আর্থিক, তাহলে তার জন্য বিয়ে করা নিষিদ্ধ।
সন্তান উপযুক্ত হলে বিয়ে দেয়া পিতার দায়িত্ব। যদি পিতা জীবিত না থাকেন তাহলে এ দায়িত্ব বর্তায় পরবর্তী অভিভাবকদের ওপর। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও যদি সন্তানকে বিয়ে না দেয়া হয়, আর তারা কোনো গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায়, তাহলে এ গুনাহের একটা অংশ অভিভাবকের আমল নামায়ও যায়। তাই সন্তানকে বিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসি ঠিক নয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা তোমাদের সন্তানদের বিয়ে দাও, যাদের স্বামী বা স্ত্রী নেই। তোমাদের বিয়ের উপযুক্ত দাস-দাসীদেরও বিয়ে দাও।’ (সুরা নুর: ৩২)
বিবাহের মাধ্যমে গুনাহ থেকে হিফাজত ও অর্ধেক ইমান পূর্ণ হয় বলে হাদিসে এসেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি বিয়ে করলো, তার অর্ধেক দ্বীন-ইমান পূর্ণ হয়ে গেলো। সে যেনো বাকি অর্ধেকের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করে চলে।’ (মিশকাত: ৫৩৩২)।
আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘বিবাহ হলো ইমানের অর্ধেক, যে ব্যক্তি বিয়ে করলো না, সে আমার দলভুক্ত নয়।’ (মিশকাত: ৫৩৩৮)
বৈরাগ্য ছেড়ে সংসারী হওয়ার প্রতি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ইসলামে বৈরাগ্য নেই।’ (জাদুত তলিবিন: ৬৫)
বিবাহ পরবর্তী জীবনে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক মিল-মোহাব্বত আর ভালোবাসায়ও নেকি অর্জন হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘স্বামী-স্ত্রী যখন একান্তে বসে আলাপ করে, হাসি খুশি করে, তার সওয়াব নফল ইবাদতের মতো।’ (সুনানে দারেমি: ৭৩৩)
বিয়ের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় হলো, কনের পক্ষ থেকে মাত্রাতিরিক্ত মহর না চাওয়া আর বরের পক্ষ থেকে যৌতুকের দাবি না করা। এ দুটোই ইসলামে হারাম। এর ফলে অনেক বিয়ে ভেঙে যায়। সংসারে নেমে আসে অশান্তি। হজরত উমর (রা.) বলেন, ‘হে মুসলমান সম্প্রদায়! তোমরা বিয়ে-শাদিতে মোটা অঙ্কের মোহর এবং যৌতুক দাবি করো না। কেননা আল্লাহর কাছে এটার কোন মর্যাদা নেই, যদি থাকতো তাহলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর মেয়ে ফাতেমা (রা.) এর বিয়েতে করতেন। (তিরমিজি: ৬৪৪৫)
আসুন যৌতুক মুক্ত সমাজ গড়ি এবং নিজ সন্তানকে শরীয়তসম্মতভাবে বিয়ে দেই।
