
নবী সা. অনুপম চরিত্র
মুহা. জহির আলী (রবিন)
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবার চেয়ে অধিক সাহসী এবং বীরত্বের অধিকারী ছিলেন। সর্বাধিক দানশীল ছিলেন। যখনই কেউ তার নিকট কিছু আবেদন করত, তিনি সঙ্গে সঙ্গে তা দান করে দিতেন। সর্বাপেক্ষা অধিক ধৈর্যশীল ও সহিঞ্চু ছিলেন। এমনকি সাহাবারা যখন তাকে কাফেরদের একটি গোত্রের বিরুদ্ধে বদদোয়া করতে আরজ করলেন তখন তিনি বললেন, আমি ‘রহমত’ হয়ে প্রেরিত হয়েছি ‘আযাব’ হয়ে নয়। যখন নবীজির দাঁত মুবারক আহত হয়ে গেল, তখনও তিনি তাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়াই করেছিলেন।
তিনি সর্বাধিক লজ্জাশীল ছিলেন। তার দৃষ্টি কারো চেহারার উপর স্থির হতো না। নিজের ব্যক্তিগত বিষয়ে তিনি কারো কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন না এবং রাগও করতেন না। হ্যাঁ, তবে আল্লাহর বিধানের প্রতি হস্তক্ষেপ করা হলে রাগ আসত। আর যখন রাগ আসত, তখন কেউ আর তার সামনে দাঁড়ানোর সাহস পেত না। যখন তাকে কোনো দুটি কাজের মধ্যে যে কোনো একটি গ্রহণের অধিকার দেওয়া হতো, তিনি সব সময় সহজ কাজটিই বেঁছে নিতেন।
তিনি কখনোই কোনো খাবার জিনিসের খুত বের করেননি। অবশ্য পছন্দ হলে তিনি তা আহার করতেন, অন্যথায় পরিহার করতেন। তিনি হেলান দিয়ে বসে এবং টেবিলে আহার করতেন। তার জন্য কখনো চাপাতি রুটি তৈরি করা হতো না। তিনি শস্য এবং তরমুজ, খেজুরের সাথে মিলেয়ে খেতেন। মধু এবং সর্বপ্রকার মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য স্বভাবগতই পছন্দ করতেন।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, তিনি এবং তার পরিবারের কেউই পেট ভরে যবের রুটিও ভক্ষণ করেননি। তার পরিবারে একাধারে দুই মাস পরিষ্কার এভাবে কেটে যেত, চুলায় আগুন জ্বালানোর মতো কোনো ব্যবস্থা হতো না। শুধু খেজুর এবং পানি খেয়ে কাটিয়ে দিতেন।
নবীজি নিজেই নিজের জুতো সেলাই করে নিতেন এবং কাপড়ে নিজেই তালি লাগিয়ে নিতেন। পরিবারের যাবতীয় কাজ-কর্মে সহযোগিতা করতেন। যখন কেউ তাকে দাওয়াত করত, সে ধনি হোক কিংবা গরিব হোক তার বাড়িতে চলে যেতেন। কোনো দরিদ্রকে তার দারিদ্র্যের কারণে হেয় মনে করতেন না। কোনো বড় রাজা-বাদশাহকেও তার বাদশাহীর কারণে ভয় পেতেন না। সাওয়ারির পেছনে নিজের গোলামকে বসিয়ে নিতেন। মোটা কাপড় পরিধান করতেন এবং সেলাই করা জুতা পায়ে দিতেন। সাদা কাপড় সব চাইতে বেশি পছন্দ করতেন।
অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির করতেন এবং অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা থেকে বিরত থাকতেন। নামাজ দীর্ঘ এবং খুতবা সংক্ষিপ্ত করতেন। গোলাম ও দরিদ্রের সাথে চলাফেরা করতে লজ্জাবোধ করতেন না। সুগন্ধি পছন্দ করতেন এবং দুর্গন্ধকে ঘৃণা করতেন। গুণীর সম্মান ও মূল্যায়ন করতেন। কারো সাথে ঊর্ধ্ব স্বরে কথা বলতেন না। কাউকে বৈধ খেলাধুলা করতে দেখলে তা থেকে নিষেধ করতেন না। কখনও কখনও হাসি-কৌতুকের কথাও বলতেন, কিন্তু সে ক্ষেত্রেও বাস্তবতা বহির্ভুত কিছু বলতেন না। সমস্ত মানবকুলের মধ্যে তিনি অত্যন্ত হাসিমুখে ও উত্তম চরিত্রবান ছিলেন। কেউ অপারগতা প্রকাশ করলে তার অপরাগতা মেনে নিতেন।
হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, তার আখলাখ ছিল পবিত্র কুরআনোল আখলাক। অর্থাৎ পবিত্র কুরআন যা পছন্দ করত তিনিও তা পছন্দ করতেন। হযরত আনাস (রা.) বলেন, আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খুশবুর চাইতে উত্তম কোনো খুশবু পাইনি।
