আমাদের দর্শন হাতে হাত রেখে কাজ করবে নারী-পুরুষ: প্রধানমন্ত্রী
হুমায়ুন কবির খোকন: বিশ্ব শান্তি ও নারীর ক্ষমতায়নকে মূল স্তম্ভের ওপর দাঁড় করিয়ে ভবিষ্যতে দারিদ্র্য, বৈষম্যহীন ও সংঘাতমুক্ত সমাজ গড়তে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার সকালে(স্থানীয় সময়) লন্ডনে রানি এলিজাবেথ কনফারেন্স সেন্টার-২ এ কমনওয়েলথ ওমেন্স ফোরামের একটি প্ল্যানারি সেশনে মূল বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের দর্শন হবে মানবিক উন্নয়নে নারী-পুরুষ হাতে হাত ধরে কাজ করবে। কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ডের আমন্ত্রণে কমনওয়েলথ ওমেন্স ফোরাম আয়োজিত ‘ক্ষমতায়নে শিক্ষা: কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে নারীর জন্য ‘গুণগত মানের প্রাথমিক শিক্ষা ও বাস্তবভিত্তিক মাধ্যমিক শিক্ষা এবং সমতা আনয়ন শীর্ষক’ প্ল্যানারি সেশনের মূল বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।
নারী শিক্ষার প্রসারের সুফল তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সামাজিক প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ ও গ্রামীণ নারীদের জীবনমান উন্নয়নে নারী শিক্ষা ব্যাপক সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। নারী শিক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বাল্যবিবাহ কমাতে ব্যাপক অবদান রাখছে। তিনি বলেন, আমাদের শতভাগ শিশু স্কুলে যায়। ২০০৯ সালে যেখানে স্কুলগামী মেয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৫ শতাংশ, তা এখন বেড়ে হয়েছে ৫৩ শতাংশ। শিক্ষার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৩ শতাংশ হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অধিকাংশ পদ নারীদের সংরক্ষিত। ২০০৯ সাল থেকে ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের সফলতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, নারীর সমতায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ অগ্রপ্রথিক। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের হিসেবে নারীর ক্ষমতায়নে ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৪৭তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ১৫৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম। তিনি বলেন, সম্ভবত বাংলাদেশের সংসদই বিশ্বের একমাত্র সংসদ যেখানে স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা- চারজনই নারী।
আমাদের নারীরা পাইলট, ট্রেন চালক, সশস্ত্র বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় কাজ করছে। এছাড়াও বাংলাদেশের নারীরা জেলা জজ, পুলিশ সুপার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক, রাষ্ট্রদূতের মতো উচ্চ পদগুলোতে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। নারীদের সাবলম্বী করতে সরকারের নানা উদ্যোগ ও সফলতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের আমরা বিশেষ সুবিধা দিচ্ছি। তারা বিনা জামানতে মাত্র ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ সুবিধায় ঋণ নিতে পারে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ৩০ শতাংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। বর্তমান সংসদের ২২ জন নারী সরাসরি ভোটে নির্বাচিত। সফরের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রী লন্ডন সিটি করপোরেশনে আয়োজিত নৈশভোজে অংশগ্রহণ ও বিকেলে বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সেক্রেটারি অব স্টেট পেনি মরড্যান্ট সাক্ষাত করেন।