শেখ হাসিনাকে দোষারোপের প্রাণান্তকর চেষ্টা!
হরতাল, অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর জ্বালাও-পোড়াও নেই। এটা কী ভালো লাগে তাদের? একমাত্র ভাবনা যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করা যায়? অর্থাৎ যে কোনো উপায়ে জাতির পিতার কন্যাটির জনপ্রিয়তা নষ্ট করতে হবে। তাই ইস্যু খোঁজা দরকার। লন্ডন সংকেত যথারীতি মিলে গেলো! আর অপেক্ষার দরকার কী? শুরু গেলো খেলা। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যাবে? যাক না। সাজানো কৌশল আর পরিকল্পনায় সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহার করার ছক আগেই করা ছিলো। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ঢাকার রাজপথের আচমকা চেহারা তথাকথিত “বুদ্ধীজীবী”দের এতোটাই উৎসাহিত করলো যে, তাঁরা টকশোয় জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে দিলেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজপথ প্রকম্পিত করতে “বড়ভাইদের” অনুসরণ করলেন। যেনো তাকিয়েই থাকলাম শুধু। দেশজুড়ে বিক্ষোভ, অবরোধ। সড়ক পথে হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ, নজিরবিহীন দীর্ঘ যানজট। রাজপথের সৃষ্ট উত্তেজনার রেশ রক্ষা পেলেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিও। এমন কী সেই তা-ব উপাচার্যের বাসভবনও রক্ষা পেল না। কিন্তু একবারও কী মাথায় এ প্রশ্নটি ঢুকলো না যে, উপাচার্যের চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাহলে কেন তাঁর বাসভবনে নিকৃষ্টতম হামলা, তাঁকে হত্যার চেষ্টা? সহিংসতার উদ্দেশ্য নিয়ে বুঝবার কারো বাকি নেই। এবং এটাও বুঝতে কারো কষ্ট হয় না; তরুণ-তরুণীদের মনেও ক্ষোভ -কষ্ট আছে। ভালো রেজাল্টের পর চাকরি পেতে বিলম্ব বা সরকারি চাকরি না পাওয়ার কষ্ট। মুক্তিযোদ্ধার কোটার নামে কী রকম জঘন্য দুর্নীতি-অনিয়ম হচ্ছে তা আমরা জানি। বিচারও হচ্ছে দুর্নীতিবাজদের। কিন্তু এই প্রশ্ন কী মনে জাগে না, তরুণ-তরুণীদের আবেগকে অবশ্যই আমরা সম্মান করবো তবে তাঁরা কাজটি করার আগে রাষ্ট্রের কথা কী একবারও ভাববেন না। বিক্ষোভের জোয়ারের ইতিহাস জানার আগে সচেতনদের জানা দরকার ষড়যন্ত্রের খুঁটি কোথায় কুপিয়ে রাখা হয়েছিলো। কী এর উদ্দেশ্য, কারা এসবের মদদদাতা! কোটা সংস্কারের আন্দোলন কী কেবলই অভিমানের আন্দোলন? যখন মুক্তিযোদ্ধার কোটায় চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা কম পাওয়া যাচ্ছিলো সেই তথ্য জেনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট সচিবদের সম্ভাব্য করণীয় বিষয়ে নির্দেশ দেন। আমি কিন্তু আন্দোলনের বেশ আগের কথা বলছি। কারণ, বঙ্গবন্ধুকন্যা মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের তরুণ সন্তানদের ইতিহাস এবং দায়িত্বটাকে কখনো ভুলে যান না। তরুণ-তরুণী জীবনের গল্প তাঁর জানা। তিনি কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন; ছাত্র রাজনীতি করেছেন। অষ্টম শ্রেণি শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে এদেশের প্রধানমন্ত্রী হননি। কিন্তু অযুক্তির আবেগ নিয়ে যারা কথা বলেন, আন্দোলন করেন তাঁরা নিজেরাও না; কার জন্য, কেনো এসব করছেন। নারীর ক্ষমতায়ন বাড়াতে এবং এটি নিয়ে সকল প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যাগুলো প্রধানমন্ত্রী যেখানে নিজেই কাঁধে নিয়েছেন- সেখানেই যখন দেখতে পাই তরুণীরা বিক্ষোভে আরেক ধাপ এগিয়ে; তখনই সন্দেহ গভীর হয়। আজ শুধু রাজনীতিতে নয়, নারী কোথায় নেই? আজ সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ইউএনও। জজ, জেলা জজ, হাইকোর্ট – সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, পুলিশে ওসি, এসপি, ডিআইজি, বৈমানিক অর্থাৎ সর্বত্র। নারী কোটা না থাকলে কী তা সম্ভব ছিলো? এরপরও কোটা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ও নথিপত্র বিশ্লেষণ করার সময় সরকারকে দেওয়া হলো না। অবশেষ কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। ক্ষুদ্র নৃগোষ্টী, প্রতিবন্ধী—এজাতীয় অবহেলিতদের জন্য কী করা যায় তাও ভাবা হবে এমনটা সংসদকে জানিয়েছেন তিনি। আসল কথা হচ্ছে, শেখ হাসিনাকে বেকায়দায় ফেলা যায় এটাই হতে হবে একমাত্র চেষ্টা। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার নামে এখন যারা বুলি আওড়াচ্ছেন তাঁরা কী না অতীতে দেশে অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছে। কিন্তু জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, খালেদা জিয়াদের শাসনামলে এসবের বিচার হয়নি। তাদের আমলে ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা যুদ্ধাপরাধী, ডাকাত শ্রেণীর ব্যবসায়ী, লুটপাটকারী, সর্বহারা খুনিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সরকারি দলের ক্যাডার সন্ত্রাসী, অস্ত্রবাজ, খুনিদের প্রকাশ্য বিচরণ, মন্ত্রীর বাড়িতে অবস্থানের কথা জানাও পুলিশের জন্য হারাম ছিলো। দেশের জনগণ কী সেই আমলে আর কখনো ফিরে যেতে চাইবে? হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছিলো খালেদা জিয়ার জেল হলে কঠোর আন্দোলন। কিন্তু তাতো দেখা গেলো না? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে, সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী, নিজামীদের ফাঁসি কার্যকর হবে, খালেদা জিয়া জেলে থাকবেন এসব ঘটনা কী কেউ কল্পনা করতে পারতো কখনো? আরো কঠিন সত্যি সামনের দিনগুলোতে অপেক্ষমান। তারেক রহমানকে ডান্ডা পরিয়ে ঢাকায় আনা হচ্ছে বিচার করার জন্য! সেটা অচিরেই।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ঔপন্যাসিক/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ