প্রাচীন ইসলামী যুগের বিজ্ঞান যার মাধ্যমে প্রসারিত হয়
ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ
১২০০ হাজার বছর আগেকার বাগদাদ ছিল ইসলামী দুনিয়ার একটি সমৃদ্ধশালী নগরী। খলিফা আল রশিদ, আল মামুন, আল মুতাহিদ এবং আল মুক্তাফির শাসনকালে বাগদাদ প্রায় ৫০০ বছর ধরে এটির মধ্যে বুদ্ধিজীবীর জ্ঞান এবং এর সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ ছিল।
তবে এই প্রাচীন বাগদাদে জ্ঞানের প্রসারে অন্যতম কারিগর ছিলেন খলিফা আল মামুন। আবু জাফর আবদুল্লাহ আল মামুন ইবনে হারুনের জন্ম বাগদাদে ৭৮৬ সালে। তিনি পৈতৃক সূত্রে খলিফা হলেও তার রাজত্বকালে অসামান্য উন্নতির মুখ দেখে পুরো বাগদাদ। তার শাসনামলেই বাগদাদ হয়ে উঠেছিল ইসলামী দুনিয়ার সবচেয়ে সম”দ্ধশালী এবং উন্নত নগরী।
সেসময় জ্ঞানের তীব্র ক্ষুধা মুসলিমদের নিয়ে যাচ্ছিল বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। জ্ঞান আরোহণের এই তীব্র ইচ্ছার কারণেই আল মামুন তার রাজ্যের সকলকে জ্ঞান আরোহণ করতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তিনি নিজেই সে সময়ের প্রথম হাউজ অফ উইজডম প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল এমন একটি স্থান যেখানে বিশ্বের অন্যতম জ্ঞানী এবং প-িতরা মিলিত হত এবং তার জ্ঞান নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিত। এটি ছিল বুদ্ধিজীবীদের কারখানা। এখান থেকেই জ্ঞান চারিদিকে ছড়িয়ে যেত। ইসলামী দুনিয়ার পাশাপাশি আধুনিক যুগেও তাদের অবদান এখনো টিকে রয়েছে।
এই হাউজ অফ উইজডমের মধ্যকার উজ্জ্বল প-িতদের ছিল বানু মুসা ভাই। তারা ছিলেন তখনকার বিখ্যাত গণিতবিদ এবং আবিষ্কার। এছাড়াও এই হাউজ উইজডমে ছিলেন বীজগণিতের আবিষ্কারক আল খাওয়ারিজমি, আল কিন্দি, সাঈদ ইবনে হারুন আল কাতিব, হুনায়ন ইবনে ইশাক আল ইবাদি এবং তার পুত্র ইশাক। এই বই জুড়েই এই নামগুলো বার বার বলা হয়েছে কারণ তারা সবসময় আবিষ্কারের নেশায় মগ্ন ছিলেন এবং তাদের কৃতিত্বের ফলেই আধুনিক দুনিয়া আজ এরকম উন্নত।
সেখানকার বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অনেকেই আবার খুবই ভালো অনুবাদ করতে পারত। এজন্যই গ্রিকদের রেখে যাওয়া বহু গ্রন্থ তারা আরবিতে রূপান্তরিত করে, যা পড়ে ছাপিয়ে পুরো ইসলামী দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হত। আল মামুন সকল অনুবাদকদেরকে প্রতিটি বই অনুবাদের জন্য বইয়ের ভারের সমপরিমাণ স্বর্ণ দিতেন যাতে করে তারা আরও বেশী করে বই লিখতো। তাছাড়াও তিনি বাগদাদের বহু জায়গায় গ্রন্থাগার স্থাপন করার জন্য বহু উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
খলিফা আল মামুন শুধু যে হাউজ অফ উইজডমের উন্নতি করেন তা নয়, তিনি বৈজ্ঞানিক এবং প-িতদের আলোচনায় সবসময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য মার্সাদ ফালাকি বানিয়েছিলেন যেখানে তার ব্যক্তিগত ইহুদী জ্যোতির্বিজ্ঞানী সানাদ ইবনে আলি আল ইয়াহুদি এবং মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী ইয়াহিয়া ইবনে আবি মনসুর নিয়োজিত ছিলেন।
আল মামুন তার শাসনকালে বহু বিদ্যালয় স্থাপন করার পাশাপাশি টেক্সটাইলের কারখানাও স্থাপন করেন। বলা হয়, তার সময়কালে বাগদাদে ৩৩২ টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল।
তিনি কিছু প-িতদেরকে তার জন্য একটি বিশ্বের মানচিত্র তৈরি করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তারা তার নির্দেশ মত একটি মানচিত্র বানিয়েছিলেন যার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘আল সূরা আল মামুনিয়াহ’। এই মানচিত্রটি টলেমি এবং আরও বহু গ্রিক ভৌগলিকদের আরও উন্নত মানচিত্র বানাতে সাহায্য করেছে।