ধন-সম্পদ মানুষের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ
দিলাওয়ার আহমদ কাসেমি
সংঘাতময় এ পৃথিবীতে সংঘাতের অন্যতম কারণ হলো, প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা ও বিত্তবিলাস? যেকোন উপায়ে অর্থ উপার্জন ও অঢেল সম্পদের স্বপ্নবিলাস মানুষকে দানব করে তোলে? নিজের সুখ ও সম্পদের আশায় অন্যের বৈধ অধিকার সে ছিনিয়ে নিতে প্রাণান্ত প্রয়াস চালায়? শুরু হয় ধনী-গরিবের লড়াই? শ্রেণিবৈষম্য বর্তমানে অসমান্য নয়, আসমন-জমিনসম? একদিকে ক্ষুদার্ত পীড়িত ও নিপীড়িতের গগণবিদারী আর্তনাদ? অন্যদিকে বিলাসিতা, মাদকতা ও নর্তকীর চরম নৃত্যধ্বনি শোনা যায়? পাঁচতারা হোটেলের পাদদেশেই বস্তির ঝুপড়ির বেমানান চেহারা দেখা যায়?
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদের মোহাচ্ছন্ন রাখে, যতক্ষণ না তোমরা কবরে উপনীত হও? এটি সঙ্গত নয়; অচিরেই তোমরা তা জানতে পারবে? (সুরা তাকাসুর: ১-৩)
সম্পদের ভালোবাসা যেমন মানুষের চিরন্তন স্বভাব? তেমনি সম্পদ মানুষের জন্য পরীক্ষাও? অতএব যৌক্তিক সীমার মধ্যে থাকলে এর মধ্যে দোষণীয় কিছু নেই? কিন্তু পরীক্ষা এভাবে যে এ ভালোবাসা আল্লাহর বিধান লঙ্ঘণ করতে উৎসাহ জোগায় কি না সেটা ল্য করতে হবে? সম্পদের ভালোবাসা যদি আল্লাহর আনুগত্যের সঙ্গে হয়, তবে সেটা কেবল জায়েজই নয় বরং সওয়াবের কাজ? পান্তরে এ ভালোবাসা যদি মানুষকে অন্যায়-অসত্যের পথে নিয়ে যায়, তবেই তা পাপের কারণ হয়? পবিত্র কোরআনে সম্পদের চেয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশ-নিষেধকে অধিক প্রাধান্য দেওয়ার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে? ইমানি দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের প্রতি সবিশেষ তাগিদ দেওয়া হয়েছে?
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘জেনে রেখো, তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ? (এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে) তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে মহাপুরস্কার রয়েছে?’ (সুরা আনফাল: ২৮)
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো পরীাবিশেষ আর আল্লাহ, তাঁর কাছে রয়েছে মহাপুরস্কার?’ (সুরা (তাগাবুন: ১৫)
হজরত কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, ‘প্রত্যেক উম্মতের জন্যই একটি পরীক্ষার বস্তু থাকে, আমার উম্মতের পরীার বস্ত হচ্ছে অর্থ-সম্পদ? (সুনানে তিরমিজি: ১৯০৫)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের জন্য দারিদ্রতার ভয় করছি না? বরং আমি এই ভয় করছি যে, দুনিয়ার ধন-সম্পদ তোমাদের সামনে প্রসারিত করে দেয়া হবে? তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য যেমন প্রসারিত করা হয়েছিল? তারপর তারা যেমন লালসা ও মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল তেমনি তোমরাও মোহগ্রস্ত হয়ে পড়বে এবং এই দুনিয়ার ধন-সম্পদ তাদেরকে যেমন ধ্বংস করেছিল তোমাদেরকেও তেমনি ধ্বংস করবে? (সহিহ বুখারি: ৩১৫৮, সহিহ মুসলিম: ২৯৬১)
তবে ইসলামে বৈরাগ্যবাদের স্থান নেই? বৈধ সম্পদ বৈধভাবে উপার্জন করাও একটি ইবাদত বা সওয়াবের কাজ? কেননা নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ ইসলামে যত বিধিবিধান আছে, সবগুলোই যথার্থভাবে পালনের জন্য সম্পদের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য? তা ছাড়া জীবনের সীমাহীন প্রয়োজন পূরণে সম্পদ বা অর্থের যে বাধ্যবাধকতা আছে ইসলাম কিছুতেই তা অস্বীকার করে না? তাই বলে, পরকালের অনন্ত অসীম জীবনের কথা ভুলে গিয়ে কেবল দুনিয়া নিয়েই ব্যস্ত থাকা চলবে না?