টাকা দিয়ে সবকিছু হয় না
রবিউল আলম
বেশ কিছুদিন যাবৎ মনটাকে বুঝাতে পারছি না। বড় ছেলে ওমর ফারুক শিশিরের মৃত্যুর পর থেকে সন্তানহারা পিতা-মাতার মানসিক অস্থিরতা অনুধাবন করছি। কিছুতেই মনকে এক জায়গায় স্থির রাখতে পারছি না। মাঝে মাঝে মনে হয় ম্যাডাম খালেদা জিয়ার কথা। সন্তানহারা হয়ে এবং সন্তান ছাড়া একাকী নির্জন কারাগারে জীবন যাপন করছেন। এই বয়সে কারাভোগ করতে হচ্ছে, কখন কি হয় কে জানে। প্রিয় পাঠক আপনাদের জ্ঞাতার্থে সবিনয়ে বলছি, মুজিব আদর্শ বুকে ধারন করেছি, তবুও কেন বারবার মনে হয় খালেদা জিয়ার কথা, খালেদা জিয়ার অবস্থা। কি কারণে মানুষ বুঝে না বুঝে টাকার পিছনে ঘুরঘুর করে, টাকা দিয়ে কি হয়, কখন টাকার প্রয়োজন হয়? টাকা দিয়ে শিল্প কারখানার মালিক হওয়া যায়, টাকা দিয়ে শিল্পপতি হওয়া যায়, টাকা দিয়ে মানুষ খুন করানো যায়, টাকা দিয়ে বিশাল অট্টালিকা করা যায় এসব সবাই জানেন। টাকা দিয়ে রাজনীতি হয় না, টাকা দিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব পাওয়া যায় না। টাকা দিয়ে ন্যালসন ম্যান্ডেলা, জাতির জনক, মহাত্মা গান্ধী, জর্জ ওয়াশিংটন, লেলিন, মাও সেতুং, ইন্দিরা গান্ধী, শেখ হাসিনা হওয়া যায় না। টাকার বিনিময়ে যদি নেতা ও নেতৃত্ব পাওয়া যেত তবে এদেশে প্রিন্স বিন মুসা সহ অনেক টাকাওয়ালা আছে আওয়ামীলীগ, বিএনপি কিনে নেওয়ার চেষ্টা করতো। একটি সদস্যপদ পাওয়ার জন্য মরিয়া হতে হতো না। রাজনীতির পদ পাওয়ার বিষয়ে অন্য দলের কথা জানিনা। ৪৮ বছর দলের সাথে, ৩৬ বছর পদে থেকে বর্তমানে ৩৪ নং ওয়ার্ড উত্তর আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে কত কঠিন অবস্থান ধারন করছি, তারপরেও কারি কারি টাকা নিয়ে ঘুরছে পদের জন্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তর আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে এ,কে,এম রহমত উল্লাহ ও আলহাজ্ব মো. সাদেক খানকে দিয়েছেন, যাদের টাকার প্রয়োজন হয় নাই। খালেদা জিয়া তিনবার দাবী করেন প্রধানমন্ত্রীত্বের, তার এত টাকার কি প্রয়োজন ছিল ? আজ বিএনপি নেতা-কর্মীদের কথা মনে হচ্ছে, সারা জীবন রাজনীতে করে কি জবাব দিবেন দেশবাসীর কাছে। নেত্রীকে কারাগারে রেখে রাজনীতি করতে হয়, সামনে নির্বাচন ভোট চাইতে হবে জনতার কাছে। আমার খারাপ লাগার কারন, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এতিমের টাকা আত্মসাতের অপরাধে আজ কারাভোগ করছেন। তাও আমার দেশের একজন বাঙ্গালি। ভাবনার বিষয়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ না থাকলে নিজের দলে প্রতিপক্ষ হয়ে পরে। জনগণ ও কর্মীদের কাছে না টেনেই জনপ্রতিনিধি হতে চায়। অনেক শিল্পপতি, টাকার মালিক দল না করেও মনোনয়ন চায় এবং পায়। এই বিষয়গুলি সব রাজনৈতিক পালন করে তবে আওয়ামীলীগে পুঁজিপতির সংখ্যা কম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের চেয়ে দেশ বড় বলেই মনে করেন। নেতার চাইতে কর্মীদের ভালবাসেন, অর্থের চাইতে জনগণকে কাছে টানেন। মাননীয় নেত্রীর কথাই কথা এবং আওয়ামীলীগের আলোচনা সভায় বলে থাকেন, টাকা মানুষের জীবনে সব দিতে পারে না। টাকার জন্য মরিয়া হবেন না। টাকা মানুষের চরিত্র হরণ করে। টাকা ছাড়া জীবন ও সংসার চলে না। তবে একটি প্রশ্ন হলো, কত টাকার প্রয়োজন হয় একজন মানুষের। আমার ব্যক্তিগত মতামত, একজন শিল্পতি দেশের সাধারণ মানুষের জন্য শিল্প কারখানার মাধ্যমে কর্মসংস্থান করার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন আমি তা অস্বীকার করছি না। তবে টাকা রাখার স্থান নাই, সুইছ ব্যাংকে পাচারকারীর টাকা, রাজনীতির মাধ্যমে শত কোটি টাকার অবৈধ অর্জণ, সুইছ ব্যাংকে পাচার এক বিষয় নয়। যে কারণে মনকে বুঝাতে পারছি না। পারছিনা বিএনপি-জামায়াতকে বুঝাতে মানুষের মন বলে কথা। মন কি এক স্থানে ধরে রাখা যায়। মনের ভাবনার জন্য দোষ দিবেন না। আমরা যারা জাতির জনকের দল করি তারা কি খালেদা জিয়ার কারাবরণ থেকে কিছু শিখলাম। না কি শেখ হাসিনার মত চরিত্রবান হওয়ার চেষ্টা করবো, সিদ্ধান্ত আপনাদের।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি/সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ