ক্যান্সারের সতর্কতা- কফি পানে আগ্রহ কমবে?
বিবিসি বাংলা: সম্প্রতি কফির কাপে ক্যান্সারের সতর্কবার্তাও লিখে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালত।
কফিতে থাকা অ্যাক্রিলামাইড নামের একটি রাসায়নিক নিয়ে মামলার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় স্টারবার্কস আর অন্য কফি বিক্রেতাদের খুব তাড়াতাড়ি কফি কাপে এই বার্তা সংযোজন করতে হবে। কফি বীন সেদ্ধ করা হলে বাই-প্রডাক্ট হিসাবে এই রাসায়নিক তৈরি হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদালত সতর্কবার্তা দেয়ার আদেশ দিলেও, বিজ্ঞানে বা গবেষণায় এর কোন ক্ষতির প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির ড. লেন লিকটেনফেল্ড বলেন, সাধারণত যে পরিমাণ কফি আমরা প্রতিদিন পান করি, তাতে ক্যান্সার হতে পারে, এমন কোন প্রমাণ আমরা এখনো পাইনি। অনেকে হয়তো রাসায়নিকের প্রভাব নিয়ে আমাদের সঙ্গে একমত নাও হতে পারেন। কিন্তু যারা কফি ভালোবাসেন, তাদের জন্য বলতে পারি, অন্য অনেককিছুর তুলনায় প্রতিদিন কয়েক কাপ কফিতে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি খুবই সামান্য।উচ্চ তাপমাত্রায় বানানো পাউরুটির টোস্ট, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বা রোস্ট আইটেমের মতো অনেক কিছুতেই এই রাসায়নিক স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়। তবে সেটা যাই হোক না কেন, ক্যালিফোর্নিয়ার যে নব্বই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা হয়, তার অর্ধেকই কফি নিয়ে এই সতর্কবার্তা কফির কাপে যুক্ত করে দিতে প্রস্তুতি নিয়েছে। কিন্তু এরকম একটি সতর্কবার্তা লেখা থাকার পরও লোকজন কি কফি পান করতে চাইবে?
একজন বলছিলেন, কোন একদিন তো মারা যেতেই হবে। তাহলে আমি আর কিছু কফির স্বাদ হারাবো কেন? অপর একজন কফি-প্রেমিক বলছিলেন, যেকোনো কিছুতে কিছু সমস্যা হতে পারে, তাতে এরকম সতর্কবার্তা থাকা ভালো। জেনেশুনে যদি কেউ খেতে চায় খাবে। তবে এখানে ক্যালিফোর্নিয়ায় এরকম অনেক সতর্কবার্তাই আপনি দেখতে পাবেন। সে কথা ঠিক, ক্যালিফোর্নিয়ায় অনেক অফিস, পার্কিং, এমনকি ডিজনি ল্যান্ডের সামনেও এরকম সাইনবোর্ড থাকে যেখানে লেখা আপনি রাসায়নিক প্রভাবিত এলাকায় প্রবেশ করছেন যাতে আপনার শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
বেশিরভাগ মানুষই অবশ্য এগুলো গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু সামান্য রাসায়নিক রয়েছে, এরকম প্রতিটা ক্ষেত্রে আইনের কারণে এরকম নোটিশ দিতে বাধ্য সংশ্লিষ্টরা। যে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কফি নিয়ে মামলাটি করেছিল, তারা কোন কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে তাদের আশা, এর ফলে কফি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো আক্রিলামাইড ব্যবহার কমাবে। আর কফি কোম্পানিগুলো বলছে, ওই মামলার পর ক্রেতাদের মধ্যেই অনেক বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
বাবেক রোশানের মতো অনেকে ব্যবসার মন্দা নিয়েও চিন্তিত। তিনি বলেন,বড় কোম্পানিগুলোই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তবে আমাদের ব্যবসায়েও এর প্রভাব পড়বে। একটি বড় অংশের মানুষ হয়তো এই সতর্কবার্তা দেখে কফির কাপ হাতে নিতে দ্বিধায় ভুগবে, হয়তো ভাববে, সতর্কতা হিসাবে কফি বাদ দিয়ে বরং অন্য কিছু খাওয়া ভালো। তবে কফিতে বিষ থাকার এই সতর্কবার্তা নিয়ে তিনি একাই চিন্তিত নন। এলএ টাইমসে লেখা চিঠিতে একজন পাঠক প্রশ্ন করেছেন, এরপরে কি আমাদের ঘরের বাইরে যেতেও সতর্কবার্তার মুখে পড়তে হবে? কারণ বাইরে গেলেই তো রৌদ্রে পড়তে হবে। ক্যালিফোর্নিয়ায় হয়তো সবকিছুই সম্ভব।