২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন মো. আবদুল হামিদ
হুমায়ুন কবির খোকন: প্রথমবারের মতো টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়ে ইতিহাস গড়লেন মো. আবদুল হামিদ। দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান। শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য,সিনিয়র রাজনীতিক, কূটনীতিক ব্যক্তিবর্গ এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বঙ্গভবনে পৌঁছালে আবদুল হামিদ ও তার স্ত্রী রাশিদা খানম সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান। শেখ হাসিনার সঙ্গে বোন শেখ রেহানাও ছিলেন। পরে স্পিকার শিরীন শারমিনসহ তারা একসঙ্গে দরবার হলে পৌঁছান। এসময় সামরিক বাহিনীর একটি বাদক দল ফ্যানফেয়ার বাজায়। দরবার হলে ঢোকার পরে আবদুল হামিদ ও শিরীন শারমিন মঞ্চে ওঠেন। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। সাদা পাঞ্জাবি ও মুজিব কোট পরিহিত আবদুল হামিদ শপথ বাক্য পাঠ করার পর শপথ নামায় সই করেন। এরপর তিনি সবাইকে হাত তুলে শুভেচ্ছা জানান তিনি। শপথ নিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে আবদুল হামিদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। এসময় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ফুল দিয়ে আবদুল হামিদকে শুভেচ্ছা জানান। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, গণপূর্ত মন্ত্রী খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শপথ অনুষ্ঠানে ছিলেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনও ছিলেন এই অনুষ্ঠানে। বঙ্গভবনে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বিএফইউজ সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন। কূটনীতিকদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট, চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জু, ভারতের হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, ডিপ্লোম্যাটিক কোরের ডিন ভ্যাটিকানের দূত জর্জ কোচেরি, জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপপো, ইইউ দূত রেনসে টিরিংক। শপথ অনুষ্ঠানের পর বঙ্গভবনের বারান্দায় আয়োজিত আপ্যায়নের সময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এসে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথগ্রহণ করেন আবদুল হামিদ। এ ছাড়া তিনি ২০১৩ সলের ১৪ মার্চ রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর তিনি ২০১৩ সালের ২০ মার্চ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন। আবদুল হামিদ আজ ২১তম এবং নিজে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। আবদুল হামিদ আ্যাডভোকেট ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মরহুম মো. তায়েব উদ্দিন ও মাতার নাম মরহুমা তমিজা খাতুন।
আবদুল হামিদের রাজনৈতিক জীবন শুরু ১৯৫৯ সালে তৎকালীন ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে। ১৯৬৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি সর্বসম্মতিক্রমে দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হন।