নীল কুয়াশার হাতছানি ছেড়ে অন্তিম যাত্রায় কবি বেলাল চৌধুরী
রাজু আনোয়ার : ‘নির্বাসনে মৃত্যুদ–ঠা-া চোখে দেখছি আমি/ নীল কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে আমার দেহ’ কিংবা ‘সে কি তার মৃত্যু দৃশ্যে/ পেয়েছিল পরিপূর্ণতা, কে জানে!/ না হলে ঠোঁটের কোণে চিলতে হাসিটি/ কি করে ফুটিয়ে তুলেছিল ঐ বিভ্রম;…’ এমনি হাজারো পঙ্ক্তিমালা গেঁথে তিনি আর আলোড়ন তুলবেন না কাব্যানুরাগীদের হৃদয়ের কোণে। পদ্য পঙ্ক্তির ঘ্রাণে ছুটে আসবেন না আর তার ভক্তানুরাগীরা। কারণ নীল কুয়াশায় হাতছানি ছেড়ে কবির দেহ এখন ঢাকা পড়েছে মৃত্যুর সাদা কাফনে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাদা কাফনে মোড়া প্রিয়তম এ কবিকে শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সিক্ত করলেন সর্বস্তরের মানুষ। জীবন নাটকের শেষ দৃশ্যে সত্যিই পরিপূর্ণতা পেয়েছিলেন বাংলা সাহিত্য আকাশের অন্যতম নক্ষত্র কবি বেলাল চৌধুরী।
গতকাল বেলা ১১টায় কবির মরদেহ শহীদ মিনারে নেয়া হয়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদের যৌথ এ আয়োজনে শুরুতেই কবিকে শ্রদ্ধা জানান ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, কবি রবিউল হুসাইন, কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, অধ্যাপক অজয় রায়, সাংবাদিক হারুন হাবীব, আনোয়ারা সৈয়দ হক, কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত, কবি নাসির আহমেদ, স্থপতি শামসুল ওয়ারেস, নাট্যজন ইনামুল হক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, কবি নূহ-উল-আলম লেনিন, কবি কামাল চৌধুরী প্রমুখ।
এসময় প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিকভাবে কবিকে শ্রদ্ধা জানায়Ñ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাসদ, জাতীয় প্রেসক্লাব, জাতীয় জাদুঘর, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি, রাইটার্স ক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, জাতীয় কবিতা পরিষদ, ভারতীয় দূতাবাসসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বেলাল চৌধুরী বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট কবি। তিনি আমাদের প্রিয় মূল্যবোধগুলো তুলে ধরেছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, কবি বেলাল চৌধুরী ছিলেন ‘সাহিত্যের বটবৃক্ষ’। তার কবিতায়, লেখনীতে বারবার বাংলার মাটি, মানুষ ও আকাশের কথা উঠে এসেছে। তিনি কলকাতাতেও সমান জনপ্রিয় ছিলেন।
রাশেদ খান মেনন বলেন, কবি বেলাল চৌধুরী পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের কবিদের সঙ্গে পরবর্তী প্রজন্মের কবিদের সেতুবন্ধন রচনা করে গেছেন ।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আপাদমস্তক বাঙালি এই মানুষটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন।
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বেলাল চৌধুরীর মৃত্যুতে মেধা ও মননের বড় ক্ষতি হয়ে গেলো।
শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধার পর জোহর নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে ফেনীর শর্শদীতে নেয়া হয় বেলাল চৌধুরীর মরদেহ। সেখানে আরেক দফা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন বেলাল চৌধুরী।