জিহ্বার হেফাজত
হাবীবুল্লাহ সিরাজ
আল্লাহর অপরিমেয় নিয়ামতের অন্যতম একটি হলো জিহ্বা। আরবিতে জিহ্বাকে লিসান বলে। ফারসিতে জবান। জবান মানুষের মূল স্পিড বা শক্তি। অন্যান্য প্রাণী থেকে ব্যবধানকারী। এর দ্বারা মানুষের শত সহ¯্র শুকরিয়া আদায় হয়। এর মাধ্যমে মানুষ পৌঁছে যায় মুত্তাকির উচ্চ পর্যায়ে। জবানের সঠিক ব্যবহারে মানুষ যেমন পায় আল্লাহর নৈকট্য তেমনি এর অপব্যবহারে মানুষ পৌঁছে যায় নরকের গহিন অন্ধকারে। হাদিস শরিফে হজরত সাহল ইবনে সাদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার কাছে ওয়াদা করবে যে, সে তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্তু (জবান) ও দুই রানের মধ্যস্থিত বস্তুর (লজ্জাস্থান) নিরাপত্তা করবে, আমি তার জন্য বেহেশতের জামিন হবো।
কত বড়ো কথা, জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের যে সঠিক ব্যবহারের দায়িত্ব নেবে রাসূলুল্লাহ সা. তার জান্নাতের দায়িত্ব নেবেন। এর কারণ কী ? কারণ হলো জিহ্বা যদিও একটি মাংসপি–ের নাম তাবে এটা হৃদয়ের দরজা। এটা হৃদয়ের সংবাদ সরবরাহ করে। এর ক্ষমতা প্রবল। প্রতাপশালী রাজার চেয়ে বেশী। এটা মানুষকে সম্মানের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে আবার ধ্বংসের অতলেও ডুবাতে পারে। ভালোর আদেশ, মন্দের নিষেধ, কুরআন হাদিস ফিকাহ অধ্যায়ন, দ্বীনের দাওয়াত এগুলো জিহ্বার ভালো কাজ। ঝগাড়া–বিবাদ, তিরস্কার, নিন্দা, তোষামোদ, মুনাফিকি, পরনিন্দা এসব পাপ জিহ্বার কাজ। জবানের অনর্থ কাজগুলোর বিশ্লেষণের প্রয়োজন রাখে না এ কারণে যে, এর খারাপ দিক সূর্যের মতো স্পষ্ট। যেমন জবানের অনর্থ কাজের একটি হলো ‘গিবত’ গিবত এমন এক পাপ! কুরআন ও হাদিস বুঝা যায় যে, এর মাধ্যমে নিজের আমল অন্যের আমলে চলে যায়। গিবতকারী ব্যক্তির আমলনামায় গিবতকারীর কৃত আমল চলে যায়। এ কারণে ইমাম বুখারী বলেন, যে দিন থেকে আমি জানলাম যে গিবত আমলকে ট্রান্সফর করে দেয় সেদিন থেকে আমি কারো গিবত করি না। যদি করি তাহলে আমার মায়ের গিবত করি। যেন আমার আমল আমার মায়ের আমলে চলে যায়।
গিবত সম্পর্কে কুরআনে ভয়াবহ সতর্কবাণী এসেছে, হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক ধারণা থেকে বাঁচো। নিশ্চয় কতেক ধারণা গোনাহ, এবং কারো গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারো অনুপস্থিতিতে নিন্দা (গিবত) না করে। তোমাদের কেউ তাদের মৃত ভাইয়ের গোশত খওয়া পছন্দ করবে ? নিশ্চয় না, তোমরা ঘৃণা করবে। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী পরম দয়াদু। (সুরা হুজুরাত: আয়াত ১২)
গিবত শুধু জবানের একটি দিক। এ রকমভাবে মিথ্যা বলা, অপবাদ দেয়া ও গালি দেয়া। জবানের সম্পর্কে রাসূল সা. আরো বলেন, বান্দা কখনো কখনো এমন কথা বলে যার ফলে আল্লাহ খুশি হয়ে যায় এবং এ জন্য আল্লাহ তার পদমর্যাদা বৃদ্ধি করে দেয়। অথচ বান্দা এ সম্পর্কে কিছুই জানে না। আবার কখনো বান্দা এমন কথা বলে যার ফলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হয়ে যায় এবং এ কথা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে। অথচ বান্দা এ সম্পর্কে কিছুই জানে না। বুখারীতে বর্ণিত হাদিসে জবানের দু’টি এমন ব্যবহার দেখানো হয়েছে যার দ্বারা আল্লাহ কখনো খুশি হয়ে যায় আবার কখনো রাগ হয়ে যায় অথচ বান্দা নিজেই তার জবানের এই পরিণতি জানে না। অন্যত্রে বর্ণিত আছে, তোমরা কিয়ামত দিবসে সবচেয়ে খারাপতাকে পাবে যে জবানের দ্বিমুখী ব্যবহার করেছে। সে একমুখ নিয়ে এদের কাছে যায় অন্য মুখ নিয়ে অন্যদের কাছে যায়। (বুখারী ও মুসলিম)
জবানের দ্বিমুখী ব্যবহার একটি হচ্ছে কারো ব্যাপারে অতি মাত্রায় প্রশংসা করা। যতটুকু প্রশংসার যোগ্য নয় তার দ্বিগুণ প্রশংসা করা। হজরত মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রা. হতে বণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেন, যখন তোমরা প্রশংসায় বাড়াবাড়িকারীদের দেখবে। তখন তাদের মুখে মাটি নিক্ষেপ করবে। (মুসলিম)