সম্পদে হালাল হারামের সীমারেখা
মো: আবু তালহা তারীফ
ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা। মানুষের ঈমান আক্বীদা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিধি বিধান ও দিক নির্দেশনাসহ যাবতীয় মূলনীতি পরিপূর্ণভাবে ইসলামে পেশ করা হয়েছে। ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে যেমনিভাবে আল্লাহর বিধান মেনে চলা অত্যাবশ্যক অনুরুপভাবে সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রেও তার বিধান মেনে চলাও অত্যাবশ্যক। সম্পদ উপার্জন অর্থনৈতিক জীবনের সাথে সম্পৃক্ত। এ ক্ষেত্রে যাতে ভারসাম্য ক্ষুন্ন না হয় সেজন্য ইসলাম হালাল হারামের সুষ্পষ্ট সীমারেখা নির্দিষ্ট করে রেখে দিয়েছে। ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় হালাল উপার্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। হালাল উপার্জন বলতে বৈধ উপার্জনকে বুঝায়। আল্লাহ ও তার রাসুল (স:) এর নির্দেশিত ও অনুমোদিত পন্থায় যে জীবিকা উপার্জন করা হয় তাকে হালাল উপার্জন বলে। হালাল উপার্জনের মধ্যে রয়েছে মানুষের বিপুল কল্যাণ। আল্লাহ তায়ালা হালালকে উত্তম ও পবিত্র বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা উত্তম ও পবিত্র বস্তু খাও যা আমি তোমাদের জীবিকারুপে দান করেছি”। (সূরা বাকারা-১৭২)
মনবজীবনে জীবিকার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। নিজ নিজ যোগ্যতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী জীবিকার জন্য পরিশ্রম ও চেষ্টা তদবীর করা সক্ষম প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। মানুষর দায়িত্ব হলো চেষ্টা করা। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “মানুষের কর্তব্য চেষ্টা তদবীর করা”। (সূরা নাজম-৩৯) আল্লাহ তায়ালা রিযিকদাতা তবে রিযিক অন্বেষন করার দায়িত্ব তিনি বান্দর ওপর অর্পন করেছেন। আল্লাহর ইবাদত করার পর আল্লাহ নিজেই মানুষদের পৃথিবীর জমীনে কাজ করার জন্য বলেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিযিক) সন্ধান করো” (সূরা জুমআ-১০)
পরিশ্রম না করে অলস বেকার ও কর্মবিমুখ করে ঘরে বসে থাকা ইসলামের দৃষ্টিতে ঠিক নহে। যেহেতু জীবিকা অর্জন করা অবশ্যই কর্তব্য। সেহেতু অলস বসে থাকার অবকাশ ইসলামে নেই। মহান আল্লাহর প্রেরিত সকল নবী রাসুলগণ করেছেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, হজরত দাউদ ও সুলাইমান (আ:) লৌহবর্ম তৈরি করতেন, হজরত আদম (আ:) কৃষিকাজ করতেন, হজরত নূহ (আ:) কাঠ মিস্ত্রির কাজ করতেন, হজরত ইদরীস (আ:) ছিলেন দর্জি ও হজরত মুসা (আ) ছাগল চড়াতেন”। (মুস্তাদরাক হাকেম)
কর্মবিমুখ ও অলসতা করে অথবা কাজ পাই না বলে নিরুৎসাহীত হওয়া যাবে না। পরিশ্রম করে যে কোন ধরনের কাজ করতে হবে। কাজ না পেলে সর্বদা জীবিকার্জনের চেষ্টায় লিপ্ত থাকতে হবে। কোনো অবস্থাতে বসে থাকা যাবে না। হজরত উমর (রা:) বলেন, “তোমাদের কেউ যেন জীবিকার্জনের চেষ্টায় নিরুৎসাহী হয়ে বসে না থাকে”। (কানযুল উম্মাল)
যারা পরিশ্রম না করে অলস অবস্থায় বসে থাকে এবং কোন কাজ করে না, তারা নিজেরা তাদের নিজেদের দু:খ দুর্দশা ডেকে আনে। তারা কখনও সফলতা অর্জন করতে পারবে না। যারা এমনটা করবে তারা রাসুল (স:) এর অনুসারীদের মধ্যে গন্য নয়। যারা অলস ও কর্মবিমুখ তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে রাসুল (স:) বলেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে বিনা কারণে নিজের ওপর দু:খ দুর্দশা টেনে আনে অলসতা দ্বারা উপার্জন না করে সে আমার অনুসারীদের মধ্যে গণ্য নয়”। (আল হাদিস)
বৈধ কাজের মাধ্যমেই সম্পদ বা জীবিকা উপার্জনের পথ অবলম্বন করতে হবে। হালাল উপার্জন করা ফরজ এবং অবৈধ উপায়ে ব্যবসা বাণিজ্য করা হারাম। অবৈধ উপায়ে ব্যবসা বাণিজ্য করে যে অর্থ সম্পদ হাসিল করা হয় তা খেয়ে নামাজ রোযা হজ্জ যাকাত কুল হয় না। এমনকি অবৈধ সম্পদ দ্বরা কোন নেক কাজ করলে তাও আল্লাহর নিকটগ্রহ যোগ্য হয় না। অবৈধ সম্পদ উপার্জন করা ব্যাক্তির স্থান হবে জাহান্নাম। রাসুল সা. বলেন, “যে দেহ হারাম মাল দ্বরা লালিত পালিত তা কখনো জান্নাতে যাবে না। বরং জাহান্নামেই এর জন্য উপযুক্ত ঠিকানা”। (আহমদ, তিরমিযী) রাসুল (স:) বলেন, “কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের পাপী হিসেবে উঠানো হবে, তবে যারা মুত্তাকী, ন্যায় নিষ্ঠ ও সততার সাথে ব্যবসা করেছে তাদের কথা ভিন্ন”। (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ) সুতারং সর্ব সময় দিগ দিগন্তে বিচরণ করে আল্লাহর প্রদত্ত জমীন থেকে আহর্য গ্রহণ করতে হবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য ভূমিকে সুগম করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আল্লাহই তোমাদের জন্য ভূমিকে সুগম করে দিয়েছেন, অতএব তোমরা তার দিগদিগন্তে বিচরণ করো এবং তার প্রদত্ত জীবনোপকরন থেকে আহার্য গ্রহণ কর”। (সূরা মূলক-১৫)