একাদশী পালনের নিয়ম
আশালতা বৈদ্য
শাস্ত্রের পাশাপাশি অনেকে মহাপুরুষকে মেনে বা আরও অনেক মত পথে একাদশী পালন করেন। যা মূল সাত্ত্বিক নিয়ম হতে কিছুটা ব্যতিক্রম। পালনের নিয়মের পাশাপাশি সময়েও পার্থক্য স্পষ্ট লক্ষ্যণীয়। একাদশীর মূল কাজ হলো- নিরন্তর ভগবানকে স্মরণ করা। তাই আপনারা যে নিয়মে, যে সময়ে পালন করুন না কেন, ভগবানকে ভক্তিভরে স্মরণ করাই যেন আপনারই মূল কাজ হয়। আমরা একাদশী পালনের সাত্ত্বিক নিয়মটি উল্লেখ করছি।
১। সমর্থ পক্ষে দশমীতে একাহার, একাদশীতে নিরাহার, ও দ্বাদশীতে একাহার করিবেন।
২। তা হতে অসমর্থ পক্ষে শুধুমাত্র একাদশীতে অনাহার।
৩। যদি উহাতেও অসমর্থ হন, একাদশীতে পঞ্চ রবিশস্য বর্জন করত- ফল মূলাদি অনুকল্প গ্রহণের বিধান রয়েছে।
সমর্থ পক্ষে রাত জাগরণের বিধি আছে, গৌড়ীয় ধারায় বা মহান আচার্য্যবৃন্দের অনুমোদিত পঞ্জিকায় যে সমস্ত একাদশী নির্জলা (জল ব্যতীত) পালনের নির্দেশ প্রদান করেছেন। সেগুলি সেমতে করলে সর্বোত্তম হয়। নিরন্তর কৃষ্ণভাবনায় নিরাহার থাকতে অপারগ হলে নির্জলাসহ অন্যান্য একাদশীতে কিছু- সবজি, ফলমূলাদি গ্রহণ করতে পারেন। যেমন- গোল আলু, মিষ্টি আলু, চাল কুমড়ো, পেঁপে, টমেটো, ফুলকপি ইত্যাদি সবজি ঘি অথবা বাদাম তৈল দিয়ে রান্না করে ভগবানকে উৎসর্গ করে আহার করতে পারেন। হলুদ, মরিচ, ও লবণ ব্যবহার্য। আবার অন্যান্য আহায্য যেমন- দুধ, কলা, আপেল, আঙ্গুর, আনারস, আঁখ, আমড়া শস্য, তরমুজ, বেল, নারিকেল, মিষ্টি আলু, বাদাম ও লেবুর শরবত ইত্যাদি ফলমূলাদি খেতে পারেন। উল্লেখ্য যারা সাত্ত্বিক আহারী নন এবং চা, বিড়ি/সিগারেট পান কফি ইত্যাদি নেশা জাতীয় গ্রহণ করেন, একাদশী ব্রত পালনের সময়কাল পর্যন্ত এগুলি গ্রহণ না করাই ভালো।
একাদশী করলে যে কেবলমাত্র নিজের জীবনের সদগতি হবে তা নয়। একাদশী ব্যক্তির প্রয়াত পিতা/মাতা যদি নিজ কর্ম দোষে নরকবাসী হন, তবে সেই পুত্র ই (একাদশী ব্রত) পিতা- মাতাকে নরক থেকে উদ্ধার করতে পারে।
একাদশী পারণ : (একাদশী তিথির পরদিন উপবাস ব্রত ভাঙ্গার পর নিয়ম) পঞ্জিকাতে একাদশী পারণের (উপবাসের পরদিন সকালে) যে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া থাকে, সেই সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশস্য ভগবানকে নিবেদন করে, প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ করা একান্ত দরকার। একাদশী ব্রত পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস করা নয়, নিরন্তর শ্রীভগবানের নাম স্মরণ, মনন, ও শ্রবণ কীর্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করতে হয়। এদিন যতটুকু সম্ভব উচিত। একাদশী পালনের পরনিন্দা, পরিচর্চা, মিথ্যা ভাষণ, ক্রোধ দুরাচারী, স্ত্রী সহবাস সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ।
একাদশী ব্রতের আগের দিন রাত ১২টার আগেই অন্ন ভোজন সম্পন্ন করে নিলে সর্বোত্তম। ঘুমানোর আগে দাঁত ব্রাঁশ করে দাঁত ও মুখ গহব্বরে লেগে থাকা সব খাবার পরিষ্কার করে নেওয়া সর্বোত্তম।
একাদশীতে সবজি কাটার সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন কোথাও কেটে না যায়। একাদশীতে রক্তক্ষরণ বর্জনীয়।
যারা একাদশীতে একাদশীর প্রসাদ রান্না করেন, তাদের পাঁচ ফোঁড়ন ব্যবহারে সতর্ক থাকা উচিত। কারণ পাঁচ ফোঁড়নে সরিষার তৈল ও তিল থাকতে পারে যা বর্জনীয়। একাদশীতে শরীরে প্রসাধনী ব্যবহার নিষিদ্ধ। তৈল (শরীরে ও মাথায়) সুগন্ধি সাবান সেম্পু ইত্যাদি বর্জনীয়। সকল প্রকার ক্ষৌরকর্ম- সেভ করা এবং চুল ও নক কাটা নিষিদ্ধ। লেখক : ট্রাস্টি, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট।