আদিনাথ মন্দিরের ইতিহাস হিরণময় হিমাংশু
আদিনাথ মন্দির বাংলাদেশের বিখ্যাত অন্যতম মন্দির। এটি বাংলাদেশের উপকূলীয় শহর কক্সবাজার থেকে ১২ কি.মি দূরের বঙ্গোপসাগরের মধ্যে দ্বীপ মহেশখালীতে অবস্থিত। কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার গোরকঘাটা ইউনিয়নের ঠাকুরতলা গ্রামে এই মন্দিরটি অবস্থিত, যা সমুদ্র-সমতল থেকে প্রায় ৮৫.৩ মিটার উঁচুতে। এই মন্দিরটি মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত, যা সমতল ৬৯টি সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হয়। লোককাহিনী অনুসারে মহেশখালীর মৈনাক পাহাড়ে শিবের আবির্ভাব ঘটে ত্রেতাযুগে। নাথ সম্প্রদায়ের ইতিহাস জানা যায় হিন্দু-মুসলমানদের সেতুবন্ধন হিসেবে মন্দিরটি ইতিহাসের সাক্ষী। উপমহাদেশের আদি তীর্থস্থান হিসেবে প্রত্যেক হিন্দু এখানে পূজা করে। তাই মন্দিরের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই মন্দির কমপ্লেক্সে আছে মসজিদ ও রাখাইন বৌদ্ধ বিহার। তাই অনেকে মন্দিরটিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক মনে করেন। প্রতিদিনই নিয়ম মোতাবেক আদিনাথ, অষ্টাভূজা, ভৈরব ও রাধা গোবিন্দরে একই সময়ে পূজা-অর্চনা হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতি বৎসর ফাল্গুনের শিব চতুর্দ্দশী তিথিতে পূজা-অর্চনা ও পক্ষকালব্যাপী মেলা হয়। এ সময় পূণ্য সঞ্চয় ও মনস্কামনা পূরণার্থে উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান হতে আগত তীর্থ যাত্রীদের পদচারণায় মন্দির প্রাঙ্গণ মুখরিত থাকে। মন্দিরে বিরল প্রজাতির পারিজাত ফুলগাছ রয়েছে। ভক্তগণ প্রতিনিয়ত মনস্কামনা পূরণার্থে মানত করে গাছে সূতা বেঁধে রেখে যান এবং কামনা পূর্ণ হলে সুতা খুলে পূজা অর্পণ করেন। মূল মন্দিরের পেছনের দিকে দুটি পুকুর রয়েছে। সুমুদ্র পৃষ্ঠ হতে প্রায় ২৮০ ফুট উচ্চতায় পুকুর দুটির অবস্থান হলেও এর জল কখনই শুকায় না। জনশ্রুতি রয়েছে দুটি পুকুরের মধ্যে একটিতে স্নান করলে সকল রোগ দূর হয়।
মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক কমিটি কর্তৃক প্রকাশিত বুকলেট হতে জানা যায়, নবাব আলীবর্দি খাঁন, দেওয়ান ব্রজ কিশোর লাল কানুনগোর প্রতিনিধি দেওয়ান কালিচরণের নয় বৎসরের কিশোর শরৎ চন্দ্রকে সঙ্গে নিয়ে এই দ্বীপে আসেন এবং দ্বীপটি ক্রয় করেন। পরবর্তীতে শরৎ চন্দ্র নাগা সন্ন্যাসীর সংস্পর্শে এসে দীক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি তার জমিদারীর সকল সম্পত্তি ১৮৭৬ সালে শ্রী শ্রী আদিনাথ মন্দির এর নামে দেবত্তর সম্পত্তি হিসাবে উইল করে দেন। আদিনাথ দ্বৈত ব্যবস্থাপনা পুরী অ্যাক্ট অণুযায়ী মোহন্ত শাসনে ছিল। পরবর্তীতে মোহন্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে ১৯১১ইং হতে এর ব্যবস্থাপনা সীতাকু- ¯্রাইন কমিটির অধীনে ন্যাস্ত রয়েছে। মন্দিরের তিনদিকেই সমুদ্র। প্রাকৃতিক পরিবেশে মন্দিরটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান। লেখক : কবি, সাংবাদিক।