গোপীদের কাত্যায়নী ব্রত
বাদল বৈরাগী
শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্ধের দ্বাবিংশতি অধ্যায়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পতি রূপে লাভ করার আশায় গোপীদের কাত্যায়নী ব্রতের উল্লেখ রয়েছে।
শুকদেব গোস্বমী বললেন, হেমন্তকালের প্রথম মাসে গোকুলের কুমারী কন্যাগণ দেবি কাত্যায়নীর অর্চনাব্রত পালন করেছিলেন। সারা মাস তারা কেবল হবিষ্যান্ন ভোজন করেছিলেন। হে রাজন, সূর্যোদ্বয় কালে যমুনার জলে স্নান করে, গোপীগণ দেবি দুর্গার মৃত্তিকাময়ী প্রতিমা নির্মাণ করলেন। তারপর তারা ঘঁষা চন্দনের মতো সুগন্ধযুক্ত দ্রব্য এবং সেই সঙ্গে দীপ, ফল, সুপারী, নব পল্লব, সুগন্ধ মাল্য ও ধূপসহ নানা প্রকার উপহারের দ্বারা তার পূজা করেছিলেন।
হে দেবি কাত্যায়নী, হে ভগবানের মহাশক্তি, হে মহা যোগশক্তি ধারিণী এবং শক্তিশালিনী সর্বনিয়ন্তা, অনুগ্রহ করে নন্দমহারাজের পুত্রকে আমার পতি করে দিন। আমরা আপনাকে আমাদের প্রনাম নিবেদন করি। এই মন্ত্র জপ করতে করতে কুমারী কন্যাগণ প্রত্যেকে তার পূজা করেছিলেন।
এখানে প্রণিধানযোগ্য বিষয়টি হচ্ছে, দেবি দুর্গা বহিরঙ্গা শক্তি মহামায়া নন, বরং যোগমায়ারূপে পরিচিত ভগবানের অন্তরঙ্গা শক্তি। অনেকে মনে করেন মহামায়া ও দুর্গা শব্দে বহিরঙ্গা শক্তিকেই উল্লেখ করা হয়, কিন্তু বস্তুতপক্ষে তা সঠিক নয়। বৃন্দাবনে গোপিগণ সেই অন্তরঙ্গা শক্তি যোগমায়াকেই আরাধনা করেছিলেন।
সাধারণত মানুষ দুর্গা পূজা করে কোনো জাগতিক লাভের আশায়। কিন্তু গোপীগণ এখানে কৃষ্ণকে লাভ করার আশায় দুর্গাপূজা করেছিলেন। কৃষ্ণকে সন্তুষ্ট করার জন্য তারা যে কোনো উপায় অবলম্বনে প্রস্তুত ছিলেন। সেটিই ছিল গোপিদের অত্যুৎকৃষ্ট মাহাত্ম্য। শ্রীকৃষ্ণকে পতিরূপে লাভের আশায় তারা পুরো একমাস যাবৎ দুর্গাপূজা করেছিলেন।